পাটকল চালু ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে প্রতিবাদ নয়, এ বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল রাষ্ট্রীয় ভাবে চালু, খালিশপুর দৌলতপুর’সহ ৫টি জুটমিলের শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয় গেজেট অনুযায়ী সকল বকেয়া পরিশোধ ও রাষ্ট্রায়ত্ব ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের সকল বকেয়া সঠিক হিসাব অনুযায়ী প্রদানের দাবিতে ২৯সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৪টায় খালিশ পুরের দৌলতপুর জুটমিল গেটের সামনে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ শুরুর প্রাক্কালে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টা চালায়।

পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নরম কন্ঠের একদল তরুণ সন্ত্রাসী বাহিনীদের হাতে ছিলো রামদা, কাঁচি, লোহার রড হাতে নিয়ে মিল গেটের সামনে এলে তাদের সহানুভূতির সাথে পুলিশ ও প্রশাসন দৌলতপুর জুটমিল গেটের দিকে পাঠিয়ে দেয়। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সাধারণ শ্রমিকরা এ সময় সমাবেশে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য আগে থেকেই পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা ছিলো। কিন্তু পুলিশ আমাদের এই কর্মসূচি পালনের সময় নিরাপত্তা দিয়েছিল এটা সত্য। তবে বিক্ষোভ মিছিল শুরুর পূর্বে স্থানীয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক অস্ত্রশস্ত্র ও লোহার লাঠি হাতে নিয়ে যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল সেক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানান।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় পাটকল রাষ্ট্রীয় ভাবে চালু সহ আধুনিকায়ন এবং শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা সঠিক টাকা হিসাব অনুযায়ী পরিশোধের দাবিতে দীর্ঘ ৩৮ মাস আমরা রাষ্ট্রীয় পাটকল শ্রমিকদের সাথে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। প্রবল আন্দোলনের চাপে পড়ে সরকার বাধ্য হয় এ সব পাটকল শ্রমিকদের কিছু পাওনা পরিশোধ করতে, এখনও অব্দি খালিশপুর ও দৌলতপুর’সহ ৫টি পাটকলের বকেয়া টাকা কোন শ্রমিক এখন পর্যন্ত পায়নি। নানা ভাবে তাদের টাকা প্রদানে টালবাহানা করছে।

এমন অবস্থায় শ্রমিকদের জীবনমান প্রচন্ড নাভিশ্বাস উঠেছে সরকার এ সমস্ত শ্রমিকদের পথে নামি দিয়েছে। এদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। ক্ষমতাসীন ভোটচোর নিঁঝুম রাতের অবৈধ সরকার, সরকার শ্রমিক থেকে নামিয়ে দিন মজুর দের কাতারে দার করিয়ে দিয়েছে এবং রাস্তার পথ ভিক্ষারিতে আজ পরিণত করার ষড়যন্ত্র কর যাচ্ছে। যাতে করে শ্রমিকদের মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। লিজ নেয়া নতুন নতুন মালিক দের অল্প মজুররিতে এ সব পোড়া শ্রমিকরা যাতে এ সব মিলে কাজ করতে বাধ্য হয়।

সমাবেশে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, সরকারের মহা-পরিকল্পনা হলো শ্রমিকরা যাতে সংগঠিত হতে না পারে। তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে। সরকারের এই ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ নেই। আমাদের বকেয়া বেতন আমাদের হক, আমাদের অধিকার। সরকারের কাছে আমরা কোন করুণা চাচ্ছি না।
আমাদের এই ন্যায়সঙ্গত পাওনা সরকার যদি দিতে না চায়, তাহলে আমরা নাগরিক পরিষদের নেতৃবৃন্দকে সাথে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে শ্রমিকদের সমুদয় বকেয়া আদায় করে নেব।

কিছু সময় পরে নাগরিক পরিষদের নির্ধারিত কর্মসূচি পালিত হয়। দৌলতপুর জুটমিল গেট থেকে নাগরিক পরিষদের এক বিক্ষোভ মিছিল খালিশপুর শিল্পাঞ্চেলর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে খালিশপুর জুটমিল গেটের সামনে গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এই কর্ম-সূচিতে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক শ্রমিকনেতা ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ মোজাম্মেল হক খান এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা আহবায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু। বক্তব্য রাখেন পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ফুলতলা উপজেলা সভাপতি গাজী আফজাল হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের ফুলতলা উপজেলা আহ্বায়ক মোঃ অলিয়ার রহমান শেখ, নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শামসেদ আলম শমসের, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ, খালিশপুর দৌলতপুর জুটমিল যৌথ কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন মনি।

খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মোঃ ইলিয়াস হোসেন, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপিত নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, যৌথ কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, প্লাটিনাম জুটমিল শ্রমিকনেতা মো. নূরুল ইসলাম, কার্পের্টিং শ্রমিকনেতা জামাল মোল্লা, জে জে আই শ্রমিকনেতা সামস সারফিন সামন, ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিক নেতা মোশারেফ হোসেন প্রমুখ।

বিডিনিউজ ইউরোপ/৩০সেপ্টেম্বর/জই/খুলনা