• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম
সিরিয়ার দীর্ঘ ৫৪ বছরের পতন আসাদের পলায়ন ভোলার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার” সনদপত্র অর্জন ভিয়েনা বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর থেকে একধাপ সরে এলো মারাত্মক বন্যার কবলে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ট্রিয়ার মানবিক সহায়তা সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরো জার্মানির অভিবাসন নীতি বদলে ফেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভ্যুত্থান পরবর্তী লুটপাট বন্ধ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে চায়:রিজভী ভোলার বীর সন্তান শহীদ শাকিল কে স্মরণীয় রাখতে ডিসি কে স্মারকলিপি প্রদান দেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে চাই:জামায়াত ঝালকাঠি তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

অটোয়ায় শিখ নেতা হত্যার পর ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব চরমে

কবির আহমেদ কূটনৈতিক বিশ্লেষক আন্তর্জাতিক ডেক্স
আপডেট : শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

অটোয়ায় শিখ নেতা হত্যার পর ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব চরমে।ভারত ও কানাডার মধ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিবাদ ক্রমশই তীব্র হয়ে উঠছে। কানাডার বিরুদ্ধে এবার কড়া পদক্ষেপ নিল ভারত। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের এক ফাঁকে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন,কানাডায় ভারতীয় এজেন্টরাই শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার যথেষ্ট ‘বিশ্বাসযোগ্য কারণ’ রয়েছে। তবে তিনি আরও বলেন,কানাডা ভারতের সঙ্গে কাজ করতে চায়। তারা নয়াদিল্লিকে কোনো উসকানি দিতে চায় না। কানাডা সব সময় আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

এদিকে কানাডার নাগরিকদের ভারত সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
কানাডার নাগরিকদের ভারতে আসার অনুমতি অর্থাৎ ভিসা দেওয়া আপাতত বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার ভারতীয় সময় মধ্যরাত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়েছে।

তবে ইতিমধ্যে ইস্যু হওয়া ভিসা বাতিল করার কথা জানানো হয়নি। অর্থাৎ যাদের ভিসা আছে তারা ভারত সফরে আসতে পারেন। আগামী সপ্তাহেই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ২২টি দেশের সেনা প্রধানদের সম্মেলন। সেই সম্মেলনে কানাডার সেনা প্রধানের যোগ দেওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত তার সফর বাতিলের কথা জানায়নি কানাডা।

কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখার ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া খারাপ দিকে গড়াতে পারে। কানাডায় প্রায় আড়াই লাখ ভারতীয় ছাত্রছাত্রী আছে। এছাড়া অনাবাসী ভারতীয়র সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লাখ। জাস্টিন ট্রুডোর সরকার সে দেশে যাওয়ার ভিসা দেওয়া বন্ধ করার পাশাপাশি বাছাই করা সাধারণ নাগরিকদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদিও এই ব্যাপারে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই পড়েছে কানাডা সরকার। সে দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের বড় অংশ শিখ। রাজনৈতিক, বিশেষ করে ভোটের অঙ্কেই ট্রুডো প্রশাসনের পক্ষে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন।

কানাডার নাগরিকদের ভিসা না দেওয়ার কথা ভারত সরকার সরাসরি সরকারিভাবে ঘোষণা করেনি এখনও। কানাডার ভারতীয় দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলিকে যে বেসরকারি সংস্থা ভিসা সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনা করে তারা তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত ভিসা দেওয়া বন্ধ থাকছে।

ভারতের সর্বশেষ অভিযোগ ও ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের এক ফাঁকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। তাঁদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও তাঁর আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি গত সোমবার যা বলেছি, তার পেছনে বিশ্বাসযোগ্য বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ভারত সরকারের এজেন্টরাই কানাডার মাটিতে কানাডার নাগরিককে হত্যায় জড়িত থাকতে পারে।’

খালিস্তান আন্দোলনের নেতা ও শিখ সম্প্রদায়ের হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যকাণ্ডের পর ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে গতকাল নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে, কানাডা সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় হয়েছে। একই সঙ্গে তারা কানাডার নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে।

সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর এক বক্তব্যের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়। তিনি পার্লামেন্টে এক বিবৃতিতে বলেন, শিখ সম্প্রদায়ের নেতা কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের এজেন্টরা জড়িত।

গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে গুরুদুয়ারার সামনে খুন হন হরদীপ সিং।ট্রুডোর এই বক্তব্যের পর কানাডা ও ভারত দুই দেশের কূটনীতিকদের পাল্টপাল্টি বহিষ্কারের পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নেয়। গতকাল ভারত বলেছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করলেও কখনো নয়াদিল্লির সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁরা কোনো কিছু শেয়ার করেননি।

ট্রুডো বলেন, ‘আইনের শাসনের দেশ হিসেবে ওই সব প্রক্রিয়া প্রকাশ করার ক্ষেত্রে নির্ভুল ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে। এটাই আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। একই সময়ে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, কানাডার নাগরিকেরা সুরক্ষিত। আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতির পাশে রয়েছি।’

ট্রুডো বলেন, ‘আমরা ন্যায়ভিত্তিক শাসনের পাশে রয়েছি। আমরা আইনের শাসনের পাশে রয়েছি। একটি দেশের মাটিতে তার দেশের নাগরিককে হত্যায় অন্য দেশের জড়িত থাকা কতটা গ্রহণযোগ্য, আমরা সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’

কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিন দিন ভারতের গুরুত্ব বাড়ছে। কেবল অঞ্চল হিসেবে নয়, আন্তর্জাতিক দিক বিবেচনায় আমরা ভারতের সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই। আমরা ভারতকে উসকানি বা তাদের জন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি করতে চাই না। একই সঙ্গে আমরা দ্ব৵র্থহীন ভাষায় আইনের শাসনের গুরুত্বের কথা বলতে চাই। আমরা কানাডার নাগরিকদের সুরক্ষা এবং তাদের মূল্যবোধের পাশে দাঁড়ানোর গুরুত্বের কথাও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই।’

ট্রুডো বলেন, ‘এ কারণে আমরা ওই ঘটনার সত্য উদ্‌ঘাটনে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।’ট্রুডো বলেন, ‘আমার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তাকে আমি আমার উদ্বেগের কথা বলেছি।’

কানাডার পক্ষ থেকেও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারের প্রতি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে আমাদের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি। আমরা আইনের শাসনের দেশ। আমরা কানাডার নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে এবং আমাদের মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে অব্যাহতভাবে প্রয়োজনীয় কাজ করে যাব। এটাই এখন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

বিডিনিউজ ইউরোপ/২৩সেপ্টেম্বর/জই/রাজনীতি


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ