• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
সিরিয়ার দীর্ঘ ৫৪ বছরের পতন আসাদের পলায়ন ভোলার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার” সনদপত্র অর্জন ভিয়েনা বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর থেকে একধাপ সরে এলো মারাত্মক বন্যার কবলে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ট্রিয়ার মানবিক সহায়তা সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরো জার্মানির অভিবাসন নীতি বদলে ফেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভ্যুত্থান পরবর্তী লুটপাট বন্ধ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে চায়:রিজভী ভোলার বীর সন্তান শহীদ শাকিল কে স্মরণীয় রাখতে ডিসি কে স্মারকলিপি প্রদান দেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে চাই:জামায়াত ঝালকাঠি তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

১৯৭০ এর ৪ ডিসেম্বর এবং মজলুম মওলানা ভাসানী

গোলাম মোস্তফা রাজনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকা
আপডেট : শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০

‘৭০ এর ৪ ডিসেম্বর এবং মওলানা ভাসানী

বিজয়ের মাসে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ভূমিকা প্রসঙ্গে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। কারণ স্বায়ত্তশাসনের প্রাথমিক আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে তার ছিল বলিষ্ঠ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ‘পশ্চিম পাকিস্তান’কেন্দ্রিক পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসনের যে পর্যায়ক্রমিক আন্দোলন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল, মওলানা ভাসানী ছিলেন তার একজন প্রধান নির্মাতা।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে ১২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার যথারীতি চরম উপেক্ষা দেখিয়েছে, এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও তখন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। অন্যদিকে মওলানা ভাসানী নিয়েছিলেন দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতার অবস্থান। তিনি সেই সময় অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেই অবস্থায় ও হাসপাতালের বিছানা থেকে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন উপদ্রুত অঞ্চলে।

উপদ্রুত এলাকা সফর করে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ মওলানা ভাসানী এরপরই সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের ৩০ নভেম্বর এক প্রচারপত্রের মাধ্যমে আহ্বান জানানোর পর ৪ ডিসেম্বর আবার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে করেন এক বিশাল জনসভা। সেই জনসভায় মওলানা ভাসানী তার বক্তৃতায় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর উদ্দেশে বলেন, ‘১৯৫৭ সালে আজ থেকে ১৩ বছর পূর্বে কাগমারী সম্মেলনে আমি বলেছিলাম যে, পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষের প্রতি তোমাদের শোষণ, জুলুম ও বেইনসাফী কার্যকলাপ বন্ধ না হলে আমি ‘আস্সালামুআলাইকুম’ দিতে বাধ্য হবো। সর্বনাশা ঝড়ে লক্ষ-লক্ষ লোক মরলো, তোমরা কেউ দেখতে আসলে না। ঝড়ের আগাম খবর দিলা না। গাছের ডালে, ঘরের চালে, ক্ষেতে খামারে দেখে আসলাম শুধু লাশ আর লাশ ও শত শত মৃত গবাদি পশু। মানুষের ঘর-বাড়ি নাই ঝড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আজ আমি চূড়ান্তভাবে তোমাদের জানাচ্ছি ‘আস্সালামুআলাইকুম’। বলছি ‘লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন’।
অর্থাৎ তোমার রাস্তায় তুমি যাও, আমাকে আমার রাস্তায় চলতে দাও। এরপর তিনি বলেন, ‘আজ তাই একদফা, স্বাধীনতার দফা আমি উত্থাপন করছি।
এটা ছিল প্রকারান্তরে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা। এর ভিত্তিতেই মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল। প্রমাণিত হয়েছে, ন্যাপ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পক্ষে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে প্রধান নেতার অবস্থান অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল।

৪ ডিসেম্বরের মওলানা ভাসানীর ঘোষণা প্রকাশিত হল, “. . . এশিয়া, আফ্রিকা ও লাটিন আমেরিকার সংগ্রামী জনগণের মহান নেতা মওলানা ভাসানী গতকাল শুক্রবার ঢাকার পল্টন ময়দানের অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসমুদ্রের দাঁড়িয়ে ‘সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান’ প্রতিষ্ঠার মরণপণ সংগ্রামের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা করিয়াছেন।’

মওলানা ভাসানী শুধুমাত্র স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি বরং সসস্ত্র মুক্তির সংগ্রামে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে ছুটে গিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চলে। জনসভা ও জনসংযোগ করে করে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষকে স্বাধীনতার সংগ্রামে জাগিয়ে তুলেছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৩ জানুয়ারি নওগাঁয়, ১৪ জানুয়ারি রাজশাহীতে, ১৮ জানুয়ারি রংপুরে এবং ২০ জানুয়ারি গাইবান্ধায় স্বাধীনতার সংগ্রামকে তৃণমুলে ছড়িয়ে দিতে সেই সাথে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরী করতে মওলানা ভাসানী জনসভা করেন।
গাইবান্ধার জনসভায় তিনি বলেন, “আমি মুসলমান এবং মুসলমান হয়েই মরবো। তবে তার আগে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করব”।
২৬ জানুয়ারি চাঁদপুরের হাজিগঞ্জের জনসভায় মওলানা বলেন, ” স্বাধীনতার জন্য যদি প্রয়োজন হয় তবে শেষ রক্তবিন্দু দেব। স্বাধীনতা সংগ্রামকে কামান-বন্দুক দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না”
২৭ জানুয়ারী ফেনীতে জনসভায় ভাসানী বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার থেকে বাংলার সিপাহসালার হওয়ার আহ্বান জানান।
৩০ জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে এক বিশাল জনসভায় তিনি দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে তৈরি থাকার আহ্বান জানান।
৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরো এক সপ্তাহ চট্টগ্রাম এবং সিলেটে মোট ৬ টি জনসভায় স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জনগনকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার মানুষটিই ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। আজ দেশের এই দুর্দিনে, আধিপত্যবাদের থাবার মুখে আমাদের খুব প্রয়োজন মওলানা ভাসানীর আদর্শ এবং তার আদর্শের মানুষ।

লেখকঃ
সুমনা ইসলাম
গবেষক, মওলানা ভাসানী আর্কাইভ

তথ্য সূত্রঃ নানান মাত্রায় মওলানা ভাসানী(সৈয়দ ইরফানুল বারী), মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী (সৈয়দ আবুল মকসুদ), মজলুম মওলানা ভাসানী স্মারক সংকলন,সাপ্তাহিক প্রশান্তি,ব্রেকিং নিউজ, মুক্ত কলম।

বিডিনিউজ ইউরোপ /৪ নভেম্বর/ জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ