গ্রিসে মৌসুমি কর্মীদের ভিসা নীতি সংক্রান্ত করণীয়।মৌসুমি কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের অভিন্ন কোন নীতি নেই । প্রতিটি দেশের আছে নিজস্ব নীতিমালা। ইউরোপের দেশগুলোতে মূলত কৃষিখাতেই মৌসুমি কর্মীর প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি।মৌসুমি কর্মীদের জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভিসা ইস্যু করা হয়। ফসল তোলা কিংবা ফসল প্রক্রিয়াজাত করার সময়টাতে এই ভিসা ইস্যু করা হয়। যেমন, ক্রিসমাসের সময় পোল্ট্রি খাতে মৌসুমি কর্মী নেওয়া হয়।মৌসুমি কর্মী ভিসা নিয়ে যারা আসেন তাদের সাধারণত অন্য কাজ করতে দেওয়া হয় না। কাজ শুরুর আগে আগে তাদের ইউরোপে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় এবং কাজ শেষে তাদের চলে যেতে হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন নীতি অনুযায়ী মৌসুমি কর্মী ভিসায় গ্রিসে সর্বোচ্চ ছয় মাস কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।তবে এসব নিয়ম থাকলেও গ্রিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য কঠিন মনোভাব পোষণ করেন। ৪২৫১/২০১৪ সালে গ্রিক সংসদে মাইগ্রেশন নীতিমালা যেটি করেছেন সেই আইনে কিছু লোক গ্রিসে আসতে পেরেছে। গ্রিক কনস্যুলার কর্তৃপক্ষ চাকরির চুক্তিপত্র যাচাই করে এই ভিসা ইস্যু করে। যে নিয়োগকর্তা বা মালিকানা পত্রের মাধ্যমে আপনাকে নিয়োগ দেবে, তার প্রতিষ্ঠানেই আপনাকে কাজ করতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় গ্রিস কর্তৃপক্ষ মানবে না। ফলে, যে প্রতিষ্ঠানে আপনার চাকরি হবে, সেই প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ মিলবে না।
কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন শিল্পসহ বেশ কয়েকটি খাতে এই মৌসুমি কর্মী ভিসা ইস্যু করে গ্রিস। তবে, মৎস্যখাতে যারা কাজ করবেন, তাদের সর্বোচ্চ ১০ মাসের ভিসা দেওয়া হয়। মিশর, বাংলাদেশ ও আলবেনিয়ার মতো কয়েকটি দেশের সঙ্গে গ্রিসের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। ফলে মৌসুমি কর্মী ভিসার ক্ষেত্রেও বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন ওইসব দেশের নাগরিকেরা।বাংলাদেশ গ্রিসের মধ্যকার চুক্তির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিশর থেকে যে বিশ হাজার করে মৌসুমি শ্রমিক আনার কথা রয়েছে সেটি এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন নি তবে গ্রিসের সচরাচর অভিবাসন নীতি সংক্রান্ত নীতিমালার উপরে হাতে গোনা কিছু লোকের ভিসা দিয়েছে দিল্লিতে অবস্থিত গ্রিক দূতাবাস। এই ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার সংখ্যা টি ১০/১৫ জনের মধ্যে সীমিত। এটিকে দালাল চক্র বিভিন্ন রসে রসাল করার চেষ্টা করতেছে।
২০২২ সালের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি বছর চার হাজার বাংলাদেশিকে মৌসুমি ভিসা দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার অনথিভুক্ত বাংলাদেশি বর্তমানে গ্রিসে কর্মরত। এই প্রকল্পের অধীনে তারা সবাই নিয়মিত হওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছেন।
বাংলাদেশি কর্মীদের পাঁচ বছরের জন্য এই ভিসাটি দেওয়া হয়। তবে শর্ত থাকে, এই ভিসার অধীনে বছরে নয় মাস কাজ করার সুযোগ পাবেন একজন কর্মী। বাকি তিন মাস ওই কর্মী আর গ্রিসে থাকতে পারবেন না। গ্রিস ছেড়ে নিজ দেশ বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশে চলে যেতে হবে। এভাবে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পরেও তাদের আবারো গ্রিস ছেড়ে যেতে হবে।
কী পরিমাণ ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয়?
প্রতি দুই বছর কোটা পদ্ধতিতে ভিসার সংখ্যা ঘোষণা করে গ্রিক কর্তৃপক্ষ। তবে বছরে বছরে এই সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে। কোনো বছর ১৫ হাজার, কোনো বছর পাঁচ হাজার মৌসুমি কাজের ভিসা দেওয়া হয়। কখনো সেই সংখ্যা ৬০ হাজারও হতে পারে।
ভিসা নীতি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টারি:
ভিসায় উল্লেখিত মেয়াদের বেশি সময় গ্রিসে থাকা যাবে না। এ কারণেই প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে গ্রিস ছেড়ে যাওয়া উচিত। গ্রিস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোতে যেতে হলে তৃতীয় দেশের নাগরিকদের নির্দিষ্ট ভিসার প্রয়োজন। তাই যে তিন মাস আপনার কাজের অনুমতি নেই, সেই সময়টায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়া ভালো সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হয়।
ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে:
মৌসুমি কর্মী ভিসা পেতে প্রশাসনিক ফি জমা দিতে হবে। তবে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকায়, বাংলাদেশের জন্য প্রশাসনিক ফি ১২০ ইউরো। তবে অন্যদের ক্ষেত্রে এটি ১৫০ ইউরো।
ভিসার জন্য আপনি যে দেশে আছেন, সেই দেশের গ্রিক কনস্যুলেট বা দূতাবাস থেকে আবেদন করতে হবে।গ্রিসে কাজ করার জন্য আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে হবে।নিয়োগকর্তা আপনাকে যে নির্দিষ্ট কাজটির জন্য নিয়োগ দিয়েছেন, তার ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে।নিয়োগকর্তার সঙ্গে আপনার সই করা চুক্তি এবং সেই চুক্তি যে গ্রিসের লেবার ইন্সপেক্টরেট অনুমোদন করেছে, তার দুটি কপি জমা দিতে হবে। এই চুক্তিপত্রে আপনার কাজের ধরন এবং আপনার বেতন উল্লেখ থাকতে হবে৷ অদক্ষ কর্মীদের ক্ষেত্রে বেতনের পরিমাণ গ্রিসের সর্বনিম্ন বেতনের কম হতে পারবে না।
আপনাকে অবশ্যই আবাসনের একটি ঘোষণা দেখাতে হবে, যেটা আপনার চুক্তির সময়কালে আপনাকে দেওয়া হবে। দুই মাসের বেতনের অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তা ফি জমা দিতে হবে।
আপনার নিয়োগকর্তার অনুরোধ অনুমোদিত হলে, আপনাকে ভিসা দেওয়া হবে।
আপনি যদি মৎস্য খাতে কাজ করেন, তাহলে নিয়োগকর্তাকে আপনার হয়ে ১৫ ইউরো জমা দিতে হবে। আপনি যেখানেকাজ করবেন, সেটি কোথায় নিবন্ধিত হয়েছে, সেটির অবস্থা এবং ধারণ ক্ষমতা উল্লেখ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সনদ জমা দিতে হবে।আগামী সেপ্টেম্বরে গ্রিসে নতুন সরকারের কেবিনেট বসবে বলে জানা গেছে হয়ত তখন নতুন কিছু সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
বিডিনিউজ ইউরোপ/১৩আগস্ট/জই/এথেন্স