ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন আশ্রয়নীতি ‘একটি বড় অগ্রগতি’ – জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷
হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের তীব্র আপত্তি ও সমালোচনার মুখেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন আশ্রয়নীতি প্রণয়নে নেয়া সিদ্ধান্তকে ‘একটি বড় অগ্রগতি’ হিসেবে দেখছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত অনলাইন পোর্টাল ইনফোমাইগ্র্যান্টস তাদের এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান,এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো৷ এই চুক্তি কার্যকর হলে, আশ্রয়প্রার্থীরা কারো একক বোঝা না হয়ে, সবাই সে দায় ভাগ করে নেবে৷ এর মধ্য দিয়ে জোটের সব দেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে বলেও মনে করেন তিনি৷
বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা ইউরোপের অভিন্ন অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি গত ৮ জুন আলোর মুখ দেখে৷ ওইদিন লুক্সেমবার্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইন অনুমোদন করে সেই বোঝাপড়া কার্যকর করার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা৷ আগামী বছর ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগেই সেই আইন পাস করার দিকে মনোযোগী ইউরোপীয় নেতারা৷
তবে অভিন্ন এই নীতি কার্যকর হলে বিপদে পড়তে পারেন বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া, সেনেগাল ও পাকিস্তানের দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা৷ কারণ নতুন নিয়মে আশ্রয় আবেদনগুলো ইইউর বহিঃসীমান্তেই নাকচ হতে পারে৷ আবার যারা ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে ঢুকতে পারবেন, তাদেরও অন্য দেশে স্থানান্তরিত করা যাবে৷
এই সিদ্ধান্ত নেয়ার দুই সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে শুরু হয়েছে দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলন৷ সেখানে যোগ দিয়েছেন ওলাফ শলৎসসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানেরা৷এই নীতি বাস্তবায়ন হলে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয়প্রার্থীদের বোঝা সব দেশ মিলে ভাগ করা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ জোটভুক্ত যে দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অনীহা দেখাবে, সেই দেশকে অভিবাসী প্রতি ২০ হাজার ইউরো অর্থ দিতে হবে৷
এটা নিয়েই আপত্তি করে আসছে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি৷ শীর্ষ সম্মেলনের আগে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাভিয়েৎসকি বলেন, তার দেশ এবং তার দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (পিআইএস) এই সংহতি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে৷ পোল্যান্ডের ইউরোপীয় সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী সিমন সিনকোভস্কি ভেল সেক বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য জোটের সদস্য রাষ্ট্র থেকে অর্থ আদায়ের সিদ্ধান্ত ওই দেশটির ‘সার্বভৌম অধিকার’ ক্ষুণ্ণ করার শামিল৷
তিনি বলেন, ‘‘একটি দেশ থেকে অভিবাসী প্রতি ২০ হাজার ইউরো দাবি করা প্রকৃত অর্থে শাস্তি দেয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়৷’’ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবের্তা মেটসোলা ব্রাসেলসে শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অভিবাসন ইস্যুতে বিতর্ক তৈরি না করে, এটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন৷
সাম্প্রতিক নৌকাডুবির প্রসঙ্গটি সামনে এনে তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপে আসার চেষ্টায় ইউরোপীয় জলসীমায় কোন পুরুষ, নারী কিংবা শিশুর মৃত্যু মোটেও কাম্য নয়৷’’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জোটভুক্ত দেশগুলোতে মোট আট লাখ ৮১ হাজার ২০০টি আশ্রয় আবেদন জমা হয়৷ যা ২০২১ সালের তুলনায় ৬৪ ভাগ বেশি৷
এদিকে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, চলতি বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে দুই হাজার ৪০০ মানুষ মারা গেছেন৷
সপ্তাহ দুয়েক আগে, লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে গ্রিস উপকূলে একটি মাছ ধরার নৌকা ডুবে যায়৷ এ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন বা মারা গেছেন৷ ধারণা করা হচ্ছে, এটি ভূমধ্যসাগরে স্মরণ কালের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনায় রূপ নেবে৷ ফলে ভূমধ্যসাগরে করণীয় নির্ধারণেও নেতারা আলাপ করেছেন বলে জানা গেছে৷
তিউনিশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট দূর করা এবং অভিবাসীর চাপ কমাতে জোটের পক্ষ থেকে ১০ কোটি ইউরো অর্থ সহায়তার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছেন ইউরোপীয় নেতারা৷ কারণ, ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অভিবাসনের জন্য তিউনিশিয়া বর্তমানে প্রধান ট্রানজিট দেশ৷
বিডিনিউজ ইউরোপ/২জুলাই/জই/জার্মান