নির্বাচন কমিশনের দিকে অভিযোগ তুলে ঢাকা-১৮ উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, প্রতিনিয়ত আমাদের গণসংযোগে আওয়ামী লীগ বাধা, পাল্টা কর্মসূচি ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিলেও কমিশন কোনো সহযোগিতা করছে না।
তিনি বলেন, ধানের শীষের পক্ষে আমাদের গণসংযোগে লাখো জনতার জমায়েত দেখে আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে গেছে। যেখানে আমরা পুলিশের অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছি সেখানে তারা হামলা করছে, আবার পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। এটা কিসের আলামত? এটা গণতন্ত্রের আলামত নয়। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিলেও কমিশন তা পাত্তা দিচ্ছে না। যখন যাই, তখন খুব ভালো ভালো কথা বলে। কথা বলা পর্যন্তই থাকে। কমিশন কোনো সহযোগিতা করছে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি জন্য নির্বাচন কমিশন কোনো কাজই করছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে ১ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে গণসংযোগ শেষে উত্তরা জিয়ানজিয়ান চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের সামনের সড়কে সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি এস কথা বলেন। মঙ্গলবারের গণসংযোগেও জনতার ঢল নামে।
নেতাকর্মী ও ভোটারদের উদ্দেশ্যে এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, আওয়ামী লীগের শাসন আমল ১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত দেশে কোনো গণতন্ত্র ছিল না। এই শেখ হাসিনার আমলেও কোথাও কোনো গণতন্ত্র নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ, দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশ জীবনের শেষ রক্তবিন্দু হলেও মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হবে। যে দেশ স্বাধীন করেছেন আমার নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম, সেদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজনে জীবন দিব। আমরা অবশ্যই আমার নেত্রীর নির্দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করবো।
বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, আমরা বিশৃঙ্খলায় বিশ্বাসী না, আমরা মারামারিতে বিশ্বাসী না। আমাদের শান্তিপ্রিয় দল, শান্তিতে বিশ্বাসী। এখন পর্যন্ত আমরা ধৈর্য ধরে আছি। আমাদের ধৈর্য ধারণ মানে এই না যে আমরা দুর্বল। জনগণের উপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে যাবে, ধানের শীষে তারা ভোট দিবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত দিনে যত নির্বাচন হয়েছে, জনগণ যেসব নির্বাচনে স্বাধীনভাবে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছে ততবারই ঢাকার এই আসন থেকে ধানের শীষ জয়লাভ করেছে, খালেদা জিয়ার প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। এবারো যদি জনগণ ভোট দিতে পারে, তারা যদি ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তাহলে তারা ধানের শীষে ভোট দেবে। আগামী ১২ নভেম্বর আমাদের পোলিং এজেন্ট বুথে থাকবে এবং নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের আশপাশে থেকে জনগণকে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেব। ভোটদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা ভোট কেন্দ্রে আসবেন, আপনাদের ভোটাধিকার নিয়ে কেউ কোনো ছিনিমিনি করতে পারবে না। গুম খুন, হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি বিরুদ্ধে জনগণ ভোট দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিজয় শুরু হবে। আমরা আশাবাদী, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করবেন। যে পরিবেশ বিদ্যমান এই পরিবেশে নির্বাচন করা যায় না। তারপরও বলব, আমরা নির্বাচনে আছি, ১২ নভেম্বর ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণকে সাথে নিয়ে মাঠে থাকবো।
জাহাঙ্গীর বলেন, আওয়ামী লীগের হয়তো জনগণের ভোটাধিকার ছাড়া রাতের আধারে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার ছাড়া বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো চিন্তা ও সুযোগ নেই।
এ সময় এস এম জাহাঙ্গীরের সাথে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি দলীয় মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, জিয়া পরিষদের মহাসচিব ড এমতাজ হোসেন, ছাত্রদলের আমজাদ হোসেন শাহদাত, বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আইয়ুব হোসেনসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা-১৮ উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের উত্তরখান মাজার থেকে গণসংযোগ শুরু কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের বাধার কারণে সেখানে গণসংযোগ না করে বিকল্প হিসেবে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরে গণসংযোগ করে এস এম জাহাঙ্গীর।
এসময় গণসংযোগে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা ‘খালেদার জিয়ার সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন, তারেক রহমানের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন, তাবিথ ভাইয়ের সালাম নিন ধানের শীষে ভোট দিন, সোহেল ভাইয়ে সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন, টুকু ভাইয়ের সালাম নিন ধানের শীষের ভোট দিন, জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন, ১২ নভেম্বর সারাদিন, ধানের শীষে ভোট দিন, সিল মারো ভাই সিল মারো, ধানের শীষে সিল মারো, এলাকাবাসীকে বলে যাই, ধানের শীষে ভোট চাই, মা-বোনদের বলে যাই, ধানের শীষে ভোট চাই, ভোট দিবেন কিসে ধানের শীষে, গণতন্ত্রের মার্কা, ধানের শীষ মার্কা, ইত্যাদি শ্লোগানে শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলেন।