ইইউতে বেড়ে গেছে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংখ্যা।
২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন ৮ লাখ ৮১ হাজার ২০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ যা ২০২১ সালের তুলনায় ৬৪ শতাংশ বেশি৷গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ইউরোপের অভিবাসন প্রত্যাশী টানা দুই বছর আশ্রয় আবেদন বেড়েছে বলেও জানিয়েছে ইউরোস্ট্যাট৷ ২০২১ সালে, আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৪০০ জনের আবেদন জমা পড়েছিল। ২০২০ সালে অবশ্য বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে আবেদন কমে গিয়েছিল৷ সে বছর আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন ৪ লাখ ১৭ হাজার ১০০ জন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে এমন লাখো আবেদন জমা পড়েছিল ২০১৫-২০১৬ সালের দিকে৷ সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে তখন বছরে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। ২০২২ সালে একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলো ৪০ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে৷ রুশ আক্রমণ থেকে বাঁচতে ইউরোপের একাধিক দেশে আশ্রয় নিয়েছেন লাখো ইউক্রেনীয় শরণার্থী৷ অবশ্য তাদের বিশেষ সুরক্ষা দিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো৷
ইইউর সদস্য দেশগুলি সে ক্ষেত্রে যদিও অস্থায়ী জরুরি নিয়ম গ্রহণ করেছে৷ কারণ রুশ আগ্রাসনের পর থেকে গত এক বছরে মানুষের আগমন বেড়েই চলেছে৷ তবে সে ক্ষেত্রে মোট দুই বছরের জন্য ‘এক্সটেনশন’ সম্ভব। প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি আশ্রয় প্রক্রিয়া এড়াতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আবেদন দ্রুত বিবেচনা করতে হবে৷
২০১৩ থেকে আশ্রয় আবেদনের শীর্ষে সিরীয়রা।
২০২২ সালে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৭১ জন সিরীয় নাগরিক আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য আবেদন করেছিলেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে জমা পড়া আশ্রয় আবেদনের শতকরা ১৫ শতাংশই দেশটির নাগরিকদের৷
দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানের নাম৷ তালেবান ক্ষমতায় এলে, দেশটির অনেক নাগরিক ইউরোপে আসার চেষ্টা করছে৷ গত বছর দেশটির এক লাখ ১৩ হাজার ৪৯৫ জন নাগরিক আশ্রয় চেয়ে (১৩ শতাংশ) আবেদন করেছেন৷ভেনেজুয়েলা এবং তুরস্ক থেকে যথাক্রমে ৫০ হাজার ৫০ জন এবং ৪৯ হাজার ৭২০ জন আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ যা মোট আবেদনের ছয় শতাংশ৷
আশ্রয় আবেদন সবচেয়ে বেশি জমা পড়েছে জার্মানিতে৷ ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৩৫টি আবেদন জমা হয়েছে দেশটিতে৷ যা মোট আবেদনের প্রায় ২৫ শতাংশ৷ ফ্রান্সে ১৬ শতাংশ, স্পেনে ১৩ শতাংশ, অস্ট্রিয়ায় ১২ শতাংশ এবং ইটালিতে নয় শতাংশ আশ্রয়-আবেদন জমা পড়েছে৷
এদিকে ইইউ আরও জানায়,এই
সময়ে প্রায় ৩৪ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশী ইইউতে আবেদন করেছে। ২০২১ সালে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি ইইউ প্লাস দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছিলেন৷ এবার এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে৷ অনিয়মিত উপায়ে আসা ৩৩ হাজার ৭২৯ জন বাংলাদেশির আবেদন জমা পড়েছে ২০২২ সালে, যা পাকিস্তানের নাগরিকদের পর আবেদনের দিক থেকে সপ্তম৷ইইউএএ-এর তথ্য অনুযায়ী, তুর্কি, ভেনেজুয়েলান, কলম্বিয়ান, বাংলাদেশি ও জর্জিয়ানদের আবেদনের সংখ্যা অন্তত ২০০৮ সালের পর সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷
অনেক সময়ই আবেদনের পর সিদ্ধান্ত পেতে শরণার্থী, অভিবাসীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়৷ তবে গত বছর ৬ লাখ ৩২ হাজার আবেদনেরই সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব হয়েছে৷ এর মধ্যে ৩ লাখ ৭৯ হাজার বা প্রায় অর্ধেক আবেদনই প্রত্যাখ্যান করেছে কর্তৃপক্ষ৷ অন্যদিকে, ১ লাখ ৪৭ হাজার জন শরণার্থী হিসেবে এবং ১ লাখ ৬ হাজার জন সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন বা সহায়ক সুরক্ষার আওতায় থাকার অনুমতি পেয়েছেন৷
উল্লেখ্য, নিজ দেশে বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, রাজনৈতিক কারণে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে বা কারো জীবন হুমকির মুখে থাকলে তিনি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইউরোপের দেশগুলোতে সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করতে পারেন৷
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/২৬মার্চ/জই