মার্চ মাসের মধ্যে তিন লাখ অভিবাসীকে বৈধতা দিবে পর্তুগাল।চলমান মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় তিন লাখ কাগজবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দিতে চায় পর্তুগাল সরকার৷ এই প্রক্রিয়া গত দুই সপ্তাহ পূর্বেই শুরু হয়েছে।বিশাল এই কর্মযজ্ঞে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি৷ আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা সরকারের৷ এই লক্ষ্যে করোনা মহামারির সময় গড়ে তোলা টিকাদান কেন্দ্রগুলোকে রূপ দেয়া হচ্ছে অভিবাসী ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে৷এসব অভিবাসীদের অনেকেই বৈধ কাগজ পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করছেন৷সাপ্তাহিক এক্সপ্রেসো দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বসবাসের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা অনেক অভিবাসীই এরই মধ্যে পর্তুগাল ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেছেন৷ ফলে কারা এখন পর্তুগালে রয়েছেন, সেটি নতুন করে ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷
অভিবাসীদের বৈধ কাগজ দেয়ার প্রক্রিয়াটি এমনিতেই বেশ দীর্ঘ৷ করোনা মহামারির কারণে এই দীর্ঘসূত্রতা আরো বেড়েছে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করার পেছনে অন্য একটি কারণও রয়েছে৷পর্তুগালের সীমান্ত এবং অভিবাসন পুলিশ- এসইএফকে মার্চের শেষে বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এই সংস্থার কাজ অন্য পাঁচটি সংস্থার মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে৷ এই সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে নবগঠিত অভিবাসন এবং শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা আপমা৷ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের যেভাবে বসবাসের তাৎক্ষণিক অনুমতি দেয়া হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই পর্তুগিজ ভাষাভাষী দেশ থেকে আসা নাগরিকদের জন্যও একটি বিশেষ ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা করেছে দেশটির সরকার৷
তবে সময়সীমা মেনে এত অভিবাসীকে বৈধতা দেয়া সম্ভব হবে কিনা, এ নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷ ২০২১ সালে এসইএফ এর বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়ার পর থেকে সংস্থাটির বন্ধ হওয়ার তারিখ এখন পর্যন্ত তিনবার পিছিয়েছে৷বর্তমান সীমান্ত পুলিশ এসইএফ এর বিলুপ্তি ঘোষণার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে৷ সীমান্ত সংস্থাটির বিরুদ্ধে গত কয়েক বছরে নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে৷কেবল এসইএফই নয়, অভিবাসীদের সঙ্গে বিদ্বেষমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে দেশটির রিপাবলিকান ন্যাশনাল গার্ডের বিরুদ্ধেও৷ ২০২১ সালে অদেমিরা শহরে কৃষিখাতে কর্মরত বাংলাদেশি ও ভারতীয়সহ এশীয় অভিবাসীদের সঙ্গে জাতিগত বিদ্বেষের অভিযোগে সংস্থাটির সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন খাতে কর্মী সংকটে ভুগছে পর্তুগাল৷ অভিবাসীদের আরো কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চায় সরকার৷ সেজন্য অভিবাসী আইনে আনা হলো পরিবর্তন৷ এই আইনের মূল লক্ষ্য পর্যটন, নির্মাণসহ কর্মী সংকট থাকা খাতগুলোতে বিদেশিদের সহজে কাজের সুযোগ দেয়া৷ পাশাপাশি প্রযুক্তি, শিল্প, পর্যটন, সাংবাদিকতা, যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে অন্য দেশ থেকে কাজের সুযোগও রাখা হয়েছে আইনে৷আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী কোভিডের কারণে যেসব দেশের পর্যটন খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে পর্তুগাল তৃতীয়৷ দেশটির সরকারি হিসাবে কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে পর্তুগালের অন্তত ৫০ হাজার অতিরিক্ত কর্মী প্রয়োজন৷
ওয়ার্ল্ড ট্রাভের অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ দেশটির ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে ৮৫ হাজার শ্রমিকের ঘাটতি ছিল৷
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/৭মার্চ/জই