সুইজারল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের আফ্রিকায় পাঠানোর পরিকল্পনা।অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও ক্ষতিকর’ অভিবাসন বন্ধ করার পাশাপাশি আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়াটিও বিদেশে স্থানান্তরের কথা ভাবছে সে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল সুইস পিপলস পার্টি।গত মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ডানপন্থি সুইস পিপলস পার্টির (এসভিপি) সভাপতি মার্কো চিয়েসা। ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত ইনফোমাইগ্রেন্টসের এক প্রতিবেদনে থেকে এতথ্যজানা গেছে।ডানপন্থি সুইস পিপলস পার্টির সভাপতি মার্কো চিয়েসা বলেন, “দেশের জন্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ক্ষতিকর অভিবাসন অবশ্যই আমাদের বন্ধ করতে হবে।” আলপাইন দেশটি এ বছরের অক্টোবরে ফেডারেল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই দেশটির শক্তিশালী রাজনৈতিক দলটি এমন ঘোষণা দিলো। অনেক বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী সুইজারল্যান্ডে আসছে, আশ্রয় নিচ্ছে–সংকট এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বলে মনে করেন দলপ্রধান চিয়েসা। তিনি বলেন, “আর এ কারণে যার বা যাদের আসা উচিত, তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।”
সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় নেয়ার প্রক্রিয়াটিও আর নিজ দেশে রাখতে চায় না রাজনৈতিক দলটি। দলীয় ঘোষণাপত্রে এমন কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, রুয়ান্ডার সঙ্গে ব্রিটেনের করা পরিকল্পিত চুক্তির আদলেই আশ্রয় প্রক্রিয়াটিকে সুইজারল্যান্ডের বাইরে স্থানান্তরিত করতে চায় দলটি।
জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরগুলোর উদাহরণ টেনে ঘোষণাপত্রে এসভিপি জানিয়েছে, “একটি নতুন সহযোগিতা এবং সুরক্ষা নীতির আলোকে, সুইজারল্যান্ড আর্থিকভাবে এবং যৌক্তিকভাবে সংকটাপূর্ণ অঞ্চলে অভ্যর্থনা এবং সুরক্ষা কেন্দ্র পরিচালনায় অংশ নিতে পারে।”
“অবৈধ অনুপ্রবেশ” ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসাইলাম মডেলের দিকেও নজর রাখছে এসভিপি। তারই আদলে, বিশেষ করে বিমানবন্দরে ট্রানজিট জোন স্থাপন করার কথা ভাবছে তারা। যেখানে আশ্রয়প্রার্থীরা তাদের আবেদন জমা দিতে পারবে।
এতে আরো বলা হয়েছে, “আশ্রয়প্রার্থীরা সুইস ভূখণ্ডে থাকবে না এবং তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেতিবাচক হলে যে দেশে থেকে তারা সুইজারল্যান্ডে আসতে চেয়েছিল, সেখানে তাদের সরাসরি ফেরত পাঠানো হবে।”
অভিবাসন ইস্যুতে অস্ট্রিয়া, ব্রিটেন এবং ডেনমার্কের মতো দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছেও পোষণ করেছে রাজনৈতিক দলটি।
২০২২ সালে স্থলবেষ্টিত সুইজারল্যান্ডে আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে ২৪ হাজার ৫০০টি, যা ২০২১ তুলনায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বেশি। আবেদনকারীদের বেশিরভাগই আফগানিস্তান এবং তুরস্ক থেকে এসেছেন। এছাড়াও, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ৭৫ হাজার ইউক্রেনীয় সুইজারল্যান্ডে বিশেষ অস্থায়ী সুরক্ষা পেয়েছে।
সুইস সরকার মনে করছে, চলতি বছর দেশটিতে আশ্রয়প্রার্থী মানুষের সংখ্যা ২৪ হাজার থেকে বেড়ে তা ৪০ হাজার হতে পারে। আর এই হিসাবের মধ্যে ইউক্রেনীয়দের অন্তর্ভুক্তই করেনি তারা।
পশ্চিম ইউরোপের ছোট একটি দেশ সুইজারল্যান্ড। সরকারিভাবে এটি সুইস কনফেডারেশন নামে পরিচিত। এর উত্তরে জার্মানি, পূর্বে অস্ট্রিয়া ও লিক্টেনস্টাইন, দক্ষিণে ইতালি এবং পশ্চিমে ফ্রান্স। সুইজারল্যান্ড একটি ক্ষুদ্র পর্বতময় দেশ। এটি কেন্দ্রীয় আল্পস পর্বতমালা এবং উত্তরাঞ্চলীয় প্রাক-আল্পস পর্বতমালা নিয়ে গঠিত। এখানে পর্বত, পাহাড়, নদী ও হ্রদের বিচিত্র সমাহার ঘটেছে। দেশটির রাজধানী শহর বার্ন। এছাড়া বিখ্যাত শহর মধ্যেগুলোর মধ্যে জেনেভা এবং জুরিখ অন্যতম। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাঙ্ক। সুইজারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সদস্য
না।
সুইজারল্যান্ডের আয়তন ৪১ হাজার ২৮৫ বর্গকিলোমিটার। আয়তনে ছোট হলেও দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ। দক্ষিণের মাগগিওরে হ্রদের তীরে সমুদ্র সমতল থেকে মাত্র ১৯২ মিটার উঁচুতে রয়েছে পাইন অরণ্যের সারি। অন্যদিকে সেখান থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ৪ হাজার মিটারেরও বেশি উঁচু ৪৮টি বরফাবৃত পর্বতশৃঙ্গ। সুইজারল্যান্ডকে জুরা, সুইজারল্যান্ডীয় মালভূমি এবং আল্পস পর্বতমালা এই তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়।
২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে ৮৩ লাখ ৭২ হাজারের অধিক মানুষ বসবাস করে। সুইজারল্যান্ড বহুভাষী রাষ্ট্র এবং এখানে চারটি রাষ্ট্র ভাষা রয়েছে- জার্মান, ফরাসি, ইতালীয় এবং রোমানীয়। বাকিরা স্পেনীয়, পর্তুগিজ আর তুর্কী ভাষায় কথা বলে। সুইজারল্যান্ডের শিক্ষার হার ১০০ শতাংশ। ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সে শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/২ ফেব্রুয়ারি/জই