যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সালমান রুশদির ওপর হামলা ।বিতর্কিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত বৃটিশ লেখক সালমান রুশদির ওপর ছুরি দিয়ে ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।ইউরো নিউজ ও বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদির ওপর হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১২ আগস্ট) নিউ ইয়র্কে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে তার ওপর এই হামলা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সমূহ জানিয়েছে, বুকার প্রাইজ বিজয়ী রুশদির ওপর যখন হামলা হয়েছিল তখন তিনি চাউতাউকুয়া ইনস্টিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। হামলাকারী রুশদির ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করেছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ। তবে তার শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাৎক্ষনিকভাবে বিশদ কিছু জানা যায়নি।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এক ব্যক্তি মঞ্চের দিকে দৌঁড়ে আসেন। তিনি রুশদিকে ঘুষি মেরেছিলেন কিংবা ছুরিকাঘাত করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলার পরপর অনুষ্ঠানে হাজির লোকজন মঞ্চের দিকে ছুটে যান। ওই সময় হামলাকারীকে আটক করা হয়।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘১২ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে, এক সন্দেহভাজন পুরুষ মঞ্চে উঠে এসে রুশদি এবং একজন সাক্ষাৎকারকারীকে আক্রমণ করে। রুশদির ঘাড়ে ছুরিকাঘাতের ক্ষত হয় এবং হেলিকপ্টারে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আর কিছু জানানো হয়নি।’
কে এই সালমান রুশদি ?
সালমান রুশদি একজন ব্রিটিশ ভারতীয় লেখক।
তিনি ১৯৪৭ সালের ১৯ জুন বৃটিশ ভারতের বোম্বে
(বর্তমানে মুম্বাই) এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ
করেন। তার পুরো নাম আহমেদ সালমান রুশদি।
তিনি একজন ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক।
তার দ্বিতীয় উপন্যাস মিডনাইটস চিলড্রেন ১৯৮১
সালে ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিল। তার লেখার অনেকটা অংশ জুড়েই থাকে ভারতীয় উপমহাদেশ। বলা হয়ে থাকে যে তিনি জাদু বাস্তবতার সাথে ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী একত্রিত করে লিখেন। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে অসংখ্য সংযোগ, বিচ্ছিন্নতা ও অভিপ্রয়াণ তার লেখার অন্যতম বিষয়বস্তু।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার চতুর্থ উপন্যাস দ্য
স্যাটানিক ভার্সেস বিশ্বব্যাপী একটি বড় আকারের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। বইটি প্রকাশের পর বেশ কয়েকটি দেশের মুসলিমরা
প্রতিবাদ জানায় যা অনেক সময় সহিংস রূপ ধারণ করে। তাকে মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়। ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি এই বই রচনার জন্য ১৯৮৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিল।
রুশদি ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের Ordre
des Arts et des Lettres-এর একজন কমান্ডার মনোনীত হন। ২০০৭ সালের জুন মাসে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে নাইট ব্যাচেলর উপাধিতে ভূষিত করেন।২০০৮ সালে
দ্য টাইমস ১৯৪৫ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যের
সেরা ৫০ জন সাহিত্যিকের তালিকায় তাকে ১৩তম
স্থান প্রদান করে।
২০০০ সালের পর থেকে রুশদি মূলত নিউ ইয়র্ক
সিটির ইউনিয়ন স্কোয়ার এলাকায় বাস করে
আসছেন।২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় অবস্থিত ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে ডিস্টিংগুইশড রাইটার ইন রেসিডেন্স হিসেবে ৫ বছরের জন্য কাজ শুরু করেন।
২০০৮ সালের মে মাসে তাকে অ্যামেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস এর একজন সম্মানসূচক বিদেশী সদস্য পদ প্রদান করা হয়। ২০১০ সালের নভেম্বরে তার রুকা অ্যান্ড দ্য ফায়ার অফ লাইফ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। সে বছরেরই শুরুর দিকে তিনি আত্মজীবনী রচনা শুরু করেছেন বলে ঘোষণা দেন।
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/১৫আগস্ট/জই