প্রায় ১৩০০ শত কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের ছবি পাঠালো নাসার নতুন টেলিস্কোপ!যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তার নতুন।অত্যাধুনিক জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে তোলা মহাশূন্যের ১৩৫০ কোটি বছর আগের বিরল ছবি প্রকাশ করেছে।বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে নাসার(NASA) উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে,এযাবতকালে এটাই মহাজগতের প্রাচীনতম অবস্থার সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে তোলা চিত্র বা ছবি। এই ছবিতে তারামণ্ডলী ও ছায়াপথের যে আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ দেখা যাচ্ছে তা শত শত কোটি বছর পাড়ি দিয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে।
১৩৫০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব কেমন ছিল? মহাবিশ্বের সে সময়ের চেহারা ক্যামেরাবন্দি করল নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। ‘বিগ ব্যাং’ থিওরি এর সূত্র অনুসারে এক মহা বিস্ফোরণের পর আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। বিস্ফোরণের ঠিক পরেই যে নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছিল, সেই আদি নক্ষত্রপুঞ্জের একটি এবার ধরা পড়ল নাসার সর্বাধুনিক টেলিস্কোপে।
নাসা জানিয়েছে এখন এর চেয়ে আরও বড় সুখবর হল, বিজ্ঞানীরা ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্যের গুণগত মান বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছেন যে, এই ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে এই টেলিস্কোপ তার থেকেও অনেক গভীরে গিয়ে মহাজগতের চিত্র তুলে আনতে সক্ষম। এর ফলে, অতি শক্তিশালী এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাশূন্যের অনেক ভেতর পর্যন্ত এখন দেখা এবং তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।আমরা জানি,”আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আর এই ছবিতে আমরা ছোট ছোট যে আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে পাচ্ছেন, সেগুলো ভ্রমণ করেছে ১৩৫০ কোটি বছর ধরে,” বলছেন নাসার গবেষক বিল নেলসন। তা এতোদিন পর আমাদের টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে।
পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব থাকা আমাদের সৌরজগতের সূর্যের যে আলো আমরা পাই তা দূরত্বের কারনে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় আট মিনিট পর।এক হাজার কোটি ডলার মূল্যের এই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল গত বছর ২৫শে ডিসেম্বর। মহাকাশে সুপরিচিত হাবল টেলিস্কোপের জায়গা নিতে তৈরি করা হয় এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।
এই টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র আকাশে অনেক কিছুই পর্যবেক্ষণ করবে। তবে এর প্রধান দুটি লক্ষ্য রয়েছে। একটি হল মহাকাশে ১৩৫০ কোটি বছর আগে একেবারে প্রথম জন্ম নেয়া তারাগুলোর আলোর বিচ্ছুরণ কীভাবে ঘটেছিল তার ছবি নেয়া এবং দ্বিতীয়টি হল দূরের গ্রহগুলো মানুষের বাসযোগ্য কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা।
নাসার অত্যাধুনিক এই মহাকাশ টেলিস্কোপটি বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এই টেলিস্কোপ মহাকাশে অনেক কিছুই পর্যবেক্ষণ করবে। তবে এর প্রধান দুটি লক্ষ্য রয়েছে। একটি হলো ১৩০০ কোটি বছর আগে মহাকাশের সূচনালগ্নে প্রথম জন্ম নেওয়া নক্ষত্রগুলোর আলোর বিচ্ছুরণ কীভাবে ঘটেছিল তার ছবি তোলা এবং দ্বিতীয়টি হলো দূরের গ্রহগুলো মানুষের বাসযোগ্য কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা। এরই মধ্যে প্রথম লক্ষ্য অর্জনে সফলতা দেখিয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা গতকাল মঙ্গলবার (১২ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াট হাউজে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে তা উপস্থাপন করেন। নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা এই ছবি দেখার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম চিত্রটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। জ্যোতির্বিদ্যা এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য এটি যুগান্তকারী। আমেরিকা এবং সমস্ত মানবতার জন্য এটি ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত। ১৩ বিলিয়নেরও বেশি পুরোনো… মহাবিশ্বের ইতিহাসে প্রাচীনতম নথিভুক্ত আলো, আমাকে আবার বলতে দিন- ১৩ বিলিয়ন বছর আগের এই আলো।’
প্রায় ১৩০০ শত কোটি বছর আগের ছবি কিভাবে
দেখা গেল এতোদিন পর,তার ব্যাখ্যায় নাসার বিজ্ঞানীরা জানান প্রতি সেকেন্ডে আলোর গতিবেগ ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। সেই হিসাবে বর্তমান নক্ষত্রের যে আলো আমরা দেখি, তা কিন্তু আজকের নয়। তা আসলে ১৩০০ কোটি বছরেরও বেশি পুরোনো। যা এতদিন পর আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে।
টেলিস্কোপে পৌঁছানোর আগে কয়েকশ কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করেছে এই আলো। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ যে ছায়াপথের ছবি তুলেছে, তা ৪৬০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। সেই হিসাবে যে ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে তা ১৩০০ কোটি বছর আগেকার।
বিজ্ঞানীদের মতে, মহাজগতের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। বিজ্ঞানীদের সুবিধা হওয়ার আরও বড় কারণ হলো, উন্নত টেলিস্কোপ হওয়ায় জেমস ওয়েব উজ্জ্বল আর স্পষ্ট ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছে।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, ‘আমরা ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরেরও বেশি পেছনের দিকে তাকাচ্ছি।’ তিনি আশাপ্রকাশ করে আরো বলেন, ‘নাসা শিগগিরই আরও ছবি প্রকাশ করবে। সেগুলো প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগেকার। এসব ছবি মহাবিশ্বের আনুমানিক শুরুর বিন্দুর কাছাকাছি। অর্থাৎ আমরা প্রায় শুরুতে ফিরে যাচ্ছি।’
বিজ্ঞানীরা ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্যের গুণগত মান বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছেন যে, এই ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে এই টেলিস্কোপ তার থেকেও অনেক গভীরে গিয়ে মহাজগতের চিত্র তুলে আনতে সক্ষম। এর ফলে, অতি শক্তিশালী এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাশূন্যের অনেক ভেতর পর্যন্ত এখন দেখা এবং তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
বিজ্ঞানীদের আশা পৃথিবীর মতো যেসব গ্রহের বাতাসে গ্যাস রয়েছে, একদিন হয়তো ওয়েব টেলিস্কোপ সেসব গ্রহের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম হবে। সেটা হলে ওই সব গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা পাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তথসূত্র: বিবিসি,ভয়েস অফ আমেরিকা
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/১৫জুলাই/জই