বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের দাবী
ক্রমশ জোরদার হচ্ছে!প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সর্বশেষ যৌন কেলেঙ্কারি।প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল পদত্যাগ করেছেন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে গ্রেট ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্রমবর্ধমান প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (৫ জুলাই) তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়ে পদত্যাগ করছেন।পদত্যাগের পূর্বে ঋষি সুনাক ও সাজিদ জাভিদ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রচণ্ড সমালোচনা করেছেন। তাদের সমালোচনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল,অতি সাম্প্রতিক প্রকাশিত যৌন কেলেঙ্কারি। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে তার নিজের দলের বন্ধুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। প্রিমিয়ারে অভিযোগের কথা জানা গেছে বলে জানা গেছে।
সংবাদ সংস্থার খবরে আরও বলা হয়েছে,‘বরিস জনসন বৃটেনের নেতৃত্বের যোগ্য নন’,এই দাবিতে এই পর্যন্ত তার মন্ত্রিসভার ৮ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রীত্বের উপর আসছে একের পর এক আঘাত। সর্বশেষ ঘটনায় বরিসের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য ‘তিনি দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। এসব ঘটনায় এই পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এবং আরও ৬ জুনিয়র মিনিস্টার ও প্রতিনিধি পদত্যাগ করেন।বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,পদত্যাগ করা মন্ত্রিসভার সদস্যরা জানান,সাম্প্রতিক কিছু কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরিস জনসনের প্রশাসন কলঙ্কিত হয়েছে এবং এ পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে সরকারের সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না। ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, বরিস জনসনের সময় শেষ হয়ে এসেছে। তবে তিনি তার পদ ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
গতকাল পদত্যাগের পর এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের
অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক লিখেছেন, ‘জনগণ ন্যায়সঙ্গতভাবে আশা করে সঠিকভাবে,দক্ষতার সঙ্গে ও গুরুত্ব সহকারে সরকার পরিচালনা করা হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, এসব মানদণ্ডের জন্য লড়াই করা জরুরি। আর এজন্যই আমি পদত্যাগ করেছি।’অন্যদিকে সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপর তাঁর আস্থা নেই। তিনি আর বিশ্বাস করেন না যে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার সক্ষমতা বরিস জনসনের রয়েছে। তাই তিনি আর জনসনের সরকারে থাকতে চান না। এদিকে বিবিসি জানিয়েছে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাধিম জাহাউই এবং অন্যান্য কিছু শুন্যপদও পূরণ করেছেন তিনি।
আজ বুধবার (৬ জুলাই) পার্লামেন্টে সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তর সেশনে বোঝা যাবে বরিস তার নিজের দলের সদস্যদের কাছ থেকে কি ধরনের বিরূপ মনোভাবের মুখোমুখি হচ্ছেন। পরবর্তীতে তিনি পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারদের সঙ্গে একটি পূর্ব-নির্ধারিত ২ ঘণ্টার বৈঠকে বসবেন।নাম না প্রকাশ করার শর্তে রক্ষণশীল দলের এক সংসদ সদস্য রয়টার্সকে জানান, ‘আমার সন্দেহ, তাকে আমাদের ঘাড় ধরে ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বের করে দিতে হবে। এ সময় তিনি চিৎকার করতে থাকবেন এবং সবাইকে লাথি মারার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আমাদেরকে যদি সেই পথে যেতে হয়, আমরা সেটাই করবো।’
গত কয়েক মাসে বরিসের নেতৃত্বে বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত ও কেলেঙ্কারির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। ফলে দল ও দেশের নেতা হিসেবে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় পুলিশ তাকে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ না মানার জন্য জরিমানা করে এবং ডাউনিং স্ট্রিটের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) কর্মকর্তাদের নীতিমালা বহির্ভূত আচরণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ক্ষমা চাওয়ার পর বরিসের পদত্যাগের আহ্বান জ্যেষ্ঠ টোরি নেতাদের এছাড়াও তিনি এমন একজন সংসদ সদস্যের প্রতি সমর্থন জানান, যিনি তদবিরের আইন ভঙ্গ করেছেন। বরিসের বিরুদ্ধে সমালোচনার আরেকটি উৎস হল তিনি নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেননি, যার ফলে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা তেল ও খাবারের উচ্চ মূল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বাধ্য হচ্ছেন। সর্বশেষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় তিনি এক সংসদ সদস্যকে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় চেতনা বজায় রাখার দায়িত্ব দেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে আগে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ থাকায় বিষয়টি বেশ বিব্রতকর হয় এবং এক পর্যায়ে বরিস জনসন আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়োগের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।
গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের পদত্যাগেও কিছু সংসদ সদস্য বরিস জনসনের প্রতি আস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন।
এক মাস আগে রক্ষণশীল দলের অনাস্থা ভোটে জেতেন বরিস, যার অর্থ হচ্ছে আগামী ১ বছর তার প্রধানমন্ত্রীত্ব বাতিল বা পরিবর্তনের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাবে না।অনাস্থা ভোটে জিতলেও নিজ দলে ‘আস্থা’ হারিয়েছেন বরিস জনসন,তবে দলের কিছু সংসদ সদস্য এই আইন পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। দেড় বছর আগেও তুমুল জনপ্রিয় বরিস জনসনের সঙ্গেই ছিলেন পার্লামেন্টের বেশিরভাগ সদস্য। তার প্রধানমন্ত্রীত্বের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল ব্রেক্সিট সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করা। তবে এরপরকরোনাভাইরাস নিয়ে বরিসের নীতি প্রবল ভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং তার সরকার একের পর এক সমস্যায় পড়েছে।
ইউক্রেনকে সহায়তা করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রশংসা পেলেও দেশের জনগণের মতের উপর তার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। জনমত জরিপে তার জনপ্রিয়তা খুবই কম এসেছে।লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টার্মার বলেন, ‘এত ধরনের নোংরামি, কেলেঙ্কারি আর ব্যর্থতায় একটা বি পরিষ্কার, আর তা হল, এ সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী।’
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি ও অস্ট্রিয়ান টেলিভিশন ORF
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/৬জুলাই/জই