• শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সিরিয়ার দীর্ঘ ৫৪ বছরের পতন আসাদের পলায়ন ভোলার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার” সনদপত্র অর্জন ভিয়েনা বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর থেকে একধাপ সরে এলো মারাত্মক বন্যার কবলে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ট্রিয়ার মানবিক সহায়তা সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরো জার্মানির অভিবাসন নীতি বদলে ফেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভ্যুত্থান পরবর্তী লুটপাট বন্ধ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে চায়:রিজভী ভোলার বীর সন্তান শহীদ শাকিল কে স্মরণীয় রাখতে ডিসি কে স্মারকলিপি প্রদান দেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে চাই:জামায়াত ঝালকাঠি তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

প্রটোকোল ছাড়া অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর আলেকজান্ডার ভ্যান ডের বেলেন

কবির আহমেদ কূটনীতিক প্রতিবেদক অস্ট্রীয়া
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০

গতানুগতিক প্রটোকোল ছাড়া একজন প্রেসিডেন্ট অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর আলেকজান্ডার ভ্যান ডের বেলেন

আলেকজান্ডার ভ্যান ডের বেলেন অস্ট্রিয়ার বর্তমান রাস্ট্রপতি। তিনি রাজনীতিতে আসার পূর্বে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। অধ্যাপক থাকা অবস্থাতেই তিনি ধীরে ধীরে অস্ট্রিয়ার গ্রীণ পার্টির দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রথমদিকে তিনি গ্রীণ পার্টির একজন মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি দলের প্রধান হিসাবে অনেক বৎসর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সাল থেকে তিনি অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৪ সালের ১৮ জানুয়ারী সাবেক বৃহত্তর রাশিয়ার এস্তোনিয়ায় এক শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার রাশিয়ান অভিজাত ভন ডের বেলেন (ভ্যান ডের বেলেন) প্যাট্রিলিনাল ডাচ বংশ থেকে আগত। তাঁহার ভ্যান ডের বেলেনের প্যাট্রিলিনাল পূর্ব পুরুষেরা ১৭০০ সালের দিকে নেদারল্যান্ডস থেকে রাশিয়ান সাম্রাজ্যে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এস্তোনিয়ান পিতা-মাতার সাথে তিনি স্ট্যালিনিজমের শরণার্থী হিসাবে অস্ট্রিয়ায় আগমন করেন। সেই সময়ে অস্ট্রিয়ার Tirol রাজ্য রাশিয়ান রেড আর্মির দখলে ছিল। পরবর্তীতে তাঁর পরিবার অস্ট্রিয়ার Tirol রাজ্যের রাজধানী Innsbruck শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি তার পিতামাতার সাথে অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব লাভ করেন।

আলেকজান্ডার ভ্যান ডের বেলেন ১৯৬৬ সালে University of Innsbruck থেকে স্নাতক অর্থনীতিবিদ হিসাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত Innsbruck বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক ফিনান্স প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি Innsbruck বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারপর তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়াও তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ডিনেরও দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৯ সালের অক্টোবরে তিনি অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংসদে গ্রীণ পার্টির সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর অস্ট্রিয়ার গ্রীণ পার্টির সাথে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ভ্যান ডার বেলেন ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন Brigitte Hüttner কে এবং তাদের ৫০ বৎসরের দাম্পত্য জীবনে ২ ছেলে সন্তান রয়েছেন। অবশ্য ২০১৫ সালে তাদের মধ্যে বিবাদ বিচ্ছেদ ঘটে। তার প্রথম স্ত্রী ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

ডিসেম্বর ২০১৫ সাল থেকে ভ্যান ডের বেলেন গ্রীনস ক্লাবের দীর্ঘকালীন বন্ধু এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডরিস শ্মিদৌয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। অস্ট্রিয়ার Tirol রাজ্যের কাউনারটলে তার নিজস্ব বাড়ি আছে। তাই তিনি যখনই ছুটি পান,তখনই Tirol এ ছুটে যান। তিনি সবসময় অস্ট্রিয়ার রেলে ভ্রমণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এই ভ্রমণে তিনি কোন প্রটোকোল ব্যবহার করেন না। শুধুমাত্র দুই একজন সফরসঙ্গী সাথে রাখেন। তার সফরের পূর্বে শুধুমাত্র অস্ট্রিয়ান ফেডারেল রেলওয়েকে ইনফর্ম করা হয়। রেলওয়ে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর দুই একজন সহযোগীর জন্য বিজনেস ক্লাশের কয়েকটি সিট রিজার্ভ করেন এবং অস্ট্রিয়ান রেলওয়ের ক্যাটারিংয় পার্টনার তাঁর এই প্রায় ৪ ঘন্টার ভ্রমণে খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন। প্রেসিডেন্টের এই ভ্রমণে প্রায়ই সাধারণ জনগণ তার সাথে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতে দেখা গেছে।

আমাদের এখান থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। অস্ট্রিয়ার সহ উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ নেতানেত্রীরা প্রায়শই সাধারণ গণপরিবহন ব্যবহার করে থাকেন। তারা তাদের দেশকে এমনভাবেই সাজিয়েছেন যে, এখানে যেন কোন শ্রেণীগত পার্থক্য করা না হয়। শতভাগ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় বলে,এখানে জবাবদিহিতার সরকারও প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে আইন বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে,তাই আইন সবার জন্য সমান।

অস্ট্রিয়ায় কয়েক বৎসর পূর্বে রাস্তায় গাড়ি নির্ধারিত গতির বেশী গতিতে চালানোর জন্য অস্ট্রিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রীকে জরিমানা করা হয়েছিল। গত প্রথম লকডাউনের সময় রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার পরও নিষেধাজ্ঞার সময় অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভ্যান ডের বেলেন ও তাঁর স্ত্রীকে পুলিশ রেস্টুরেন্টের বাগান থেকে বের করে দেয়। প্রেসিডেন্ট দুঃখ প্রকাশ এবং এক বন্ধুর সাথে কথা বলার মধ্যে ডুবে যাওয়ার কথা বললে এ যাত্রায় পুলিশ জরিমানা না করে ছেড়ে দেয়। গণতন্ত্রের কথা শুধুমাত্র মুখে বা কাগজে থাকলে হবে না, তারজন্য চাই ব্যবহারিক পরিচর্যা ও অনুশীলন।
বিডিনিউজ ইউরোপ/২৪ নভেম্বর/ জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ