ইউক্রেন ছাড়ছে লাখ লাখ মানুষ, ৪০০ প্রবাসী বাংলাদেশীর পোল্যান্ডে আশ্রয় ।জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা UNHCR (ইউএনএইচসিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন,ইতিমধ্যেই ইউক্রেন থেকে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে।জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে (DW) এর বাংলা বিভাগ জানিয়েছেন,রাশিয়ার ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা হামলার পর দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয়ের চেষ্টা চালায়৷ গত কয়েকদিনে চারশ বাংলাদেশি পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তাছাড়া আরো বেশকিছু বাংলাদেশি ইউক্রেনের পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে৷পোল্যান্ডে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সাথে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ইউক্রেনে জরুরি অবস্থা জারির পর থেকেই সেখানে থাকা আমাদের বাংলাদেশিদের বিভিন্ন গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করা হয়৷ প্রায় আটশর মতো লোক সরাসরি আমাদের সাথে যুক্ত ছিল৷ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা প্রায় চারশ বাংলাদেশিকে পোল্যান্ডে সরিয়ে আনতে সক্ষম হই৷’’
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রায় ৪০০ শতাধিকের বেশি বাংলাদেশি ইউক্রেনের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তাদের মধ্যে প্রায় চারশ’ জন গেছেন পোল্যান্ডে আর বাকিরা রোমানিয়া ও হাঙ্গেরিতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ প্রবাসী এসব বাংলাদেশিকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
পুর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে ঠিক কতজন বাংলাদেশি বাস করেন তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি৷ তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের মতো হতে পারে৷ গত সপ্তাহে রাশিয়ার হামলার পর সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা সাহায্যের আবেদন জানায়৷ সেসময় স্থানীয়দের সাথে অনেক বাংলাদেশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালায়৷
ইউক্রেনে এখনো আটকে থাকা বাকি বাংলাদেশিদের উদ্ধারে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘যারা সমস্যায় পড়ছেন তারা যোগাযোগ করছেন৷ যারা এখানে এসে সমস্যায় পড়ছেন তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে৷ অনেকেই এখনো সেখানে আটকে আছেন৷ আমরা যোগযোগ করছি৷ পরিস্থিতি এমন যে, তাদের সাথে ঠিকমতো যোগযোগও করা যাচ্ছে না৷ তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে৷’’
এদিকে সীমান্তে ইউক্রেনীয় নয় এমন আশ্রয়প্রার্থীদের তুলনামূলক কম সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ সীমান্তে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেকেও একই অভিযোগ করেন৷ তাদের দাবি, সীমান্ত পুলিশ ইউক্রেনের নাগরিকদের বেশি সুযোগ দিচ্ছে যে কারণে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের দীর্ঘ সময় ধরে সীমান্তে অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷
বার্তা সংস্থাগুলোর জানায়, ইউক্রেনের পার্শাববর্তী দেশ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও রুমানিয়া সীমান্তে ইউক্রেন থেকে আসা মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার আশ্রয়প্রার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷ ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত আরও জানান,‘‘আমরা শুনেছি, প্রায় দেড়শর মতো বাংলাদেশি ইউক্রেনের জেলে আটকে আছেন৷’’
তাছাড়াও একটি বাংলাদেশি জাহাজ ইউক্রেনের বন্দরে আটকে আছেন বলেও জানান তিনি৷
জাহাজটিতে ২৯ জন নাবিক রয়েছেন যারা সবাই বাংলাদেশি৷ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ নামে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজটি যুদ্ধ শুরুর আগেই ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে গিয়েছিল বলে জানা গেছে৷
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা UNHCR (ইউএনএইচসিআর) গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন,ইতিমধ্যেই ইউক্রেন থেকে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। তারা নতুন এই ইউক্রেনী শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের নিকট আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন।
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/১মার্চ/জই