• শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সিরিয়ার দীর্ঘ ৫৪ বছরের পতন আসাদের পলায়ন ভোলার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার” সনদপত্র অর্জন ভিয়েনা বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর থেকে একধাপ সরে এলো মারাত্মক বন্যার কবলে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ট্রিয়ার মানবিক সহায়তা সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরো জার্মানির অভিবাসন নীতি বদলে ফেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভ্যুত্থান পরবর্তী লুটপাট বন্ধ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে চায়:রিজভী ভোলার বীর সন্তান শহীদ শাকিল কে স্মরণীয় রাখতে ডিসি কে স্মারকলিপি প্রদান দেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে চাই:জামায়াত ঝালকাঠি তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করতেছে সরকার

বিডিনিউজ ইউরোপ ন্যাশনাল ডেক্স
আপডেট : রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ। পর্যটকদের কাছে ‘দক্ষিণের স্বর্গ’ নামেও পরিচিত। বিগত কয়েক বছর ধরে এই দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। এতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে স্থাপনা। পর্যটকদের অসচেতনতা সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। ফলে প্রবাল, শৈবাল, সামুদ্রিক কাছিম, লাল কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ নানা জলজ প্রাণী এবং জীব- বৈচিত্র্য এখন বিলুপ্তির পথে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।
সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির ২৪তম বৈঠকে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এদিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করতে যাচ্ছে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২২তম সভায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর্যটকদের গমনাগমন নিয়ন্ত্রণপূর্বক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বয়ে কীভাবে পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায় সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থায়ী কমিটিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন এখন পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে সেখানকার পর্যটন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাছে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর্যটকদের গমনাগমন নিয়ন্ত্রণপূর্বক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে প্রতিদিন ১২৫০ জন পর্যটক যেতে পারবে। তবে সেখানে রাত্রি যাপন করা যাবে না। সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন ১২৫০ জন পর্যটকের চাপ অতিরিক্ত হবে কিনা এবং কীসের ভিত্তিতে উক্ত সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সাবের হোসেন চৌধুরী তা জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, পর্যটনের সংখ্যা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক সার্ভিসেস সংস্থার মাধ্যমে এসেসমেন্ট করা হয়েছিল। তারা প্রতিদিন ১০০০ পর্যটকের ধারণক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির বৈঠকে ১২৫০ জন পর্যটকে সীমিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ১২৫০ জনকে ভিত্তি ধরেই পরবর্তী কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। বৈঠকে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের কক্সবাজার, কুয়াকাটা সৈকতের দূষণের একটা বড় কারণ সিগারেটের বাঁট। এ জন্য আমরা ধূমপানমুক্ত দ্বীপ করতে চাই। সেন্টমার্টিনে যারা যাবে, সেখানে ধূমপান করা যাবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিভিন্ন পথে যাতায়াত করেন। সেখানে রাত্রি যাপনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। ফলে রাত্রি যাপনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গড়ে উঠছে একের পর এক রিসোর্ট, হোটেল ও মোটেল। এতে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, যত্রতত্র প্লাস্টিকের বর্জ্য, পাথর তোলা, সৈকতের বালি অপসারণ ক্রমাগত বেড়েই চলছে। দ্বীপের ভূগর্ভস্থ সুপেয় মিঠা পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। ফলে কিছু কিছু নলকূপে আসছে লবণাক্ত পানি। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ১৪টি বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও মানছেন না এই দ্বীপে আসা পর্যটকরা। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, প্রতিদিন যদি পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করে ১০০০ থেকে ১২০০ জন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখলে এখানকার ভারসাম্য ধরে রাখা সম্ভব হবে। পরিবেশবিদরা বলছেন, সেন্টমার্টিন রক্ষায় সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ মানা হেচ্েছ না। মানুষের কোলাহল এবং সৈকত ও পানিতে অতিরিক্ত দূষণের কারণে দ্বীপের বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে সামুদ্রিক কাছিম। এই দ্বীপ হচ্ছে সামুদ্রিক কাছিমের প্রজনন ক্ষেত্র।
জানা যায়, এককালে দ্বীপটিতে ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, পাঁচ প্রজাতির ডলফিন, চার প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্ট বা কড়ি জাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, দুই প্রজাতির বাদুড়সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বসবাস ছিল। এসব প্রজাতির অনেকগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এসব জীববৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে সরকার। তবে দুই দশকের বেশি সময়েও নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছেই। তবে এবার পর্যটন সংখ্যা সীমিত করে সেন্টমার্টিনকে রক্ষায় উঠে পড়ে লেগেছে সরকার। পাশাপাশি ধূমপান মুক্ত দ্বীপ করতে নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।

বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/২৭ফেব্রুয়ারি/জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ