বিশ্বনবীর প্রতি হজরত সাদ ইবনে মুয়াজের ভালোবাসা ও আবেগ! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।
বিশ্বনবীর প্রতি হজরত সাদ ইবনে মুয়াজের ভালোবাসা ও আবেগ! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এক প্রিয় সাহাবি মুসআব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত দেহের কাছে দাঁড়িয়ে এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন-
‘ঈমানদারদের মধ্যে কেউ কেউ আছে, যারা আল্লাহর কাছে তাদের কৃত অঙ্গীকার পরিপূর্ণরূপে পালন করেছে।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ২৩)
এ ওয়াদা পালনকারীদের মধ্যে অন্যতম আরেক জন ছিলেন আনাসার সাহাবি হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনিও ভালোবাসতে প্রিয় নবিকে। কেমন ছিল তার ভালোবাসা।
হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনার বাইরে থেকে হিজরত করে আসা মুসলিমদের আতিথেয়তা ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুহাজিরদের সেবায় নিজেকে সপে দিয়েছিলেন এ আনসার সাহাবি।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনায় হিজরতের পর বদর যুদ্ধ ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ও অস্তিত্বের হুমকি। সে সময় হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিষ্ঠ কণ্ঠ ও ঘোষণা ছিল প্রিয় নবি ও মুসলমানদের জন্য শান্তির বার্তা ও অনুপ্রেরণা।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবেসে ইসলাম গ্রহণ করে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ মদিনায় আগত নতুন মুহাজির মুসলিমদের নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করছিলেন হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু।
শুধু মুসলিমদের নিরাপত্তা ও আতিথেয়তাই নয় মদিনার আনসারদেরও নেতা ছিলেন তিনি। বদরের যুদ্ধের কঠিন সময়ে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃঢ় মনোবলকে আরও সুদৃঢ় করতে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেছিলেন-
‘হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমরা আপনার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করেছি। আপনার নবুয়তের সত্যতা ঘোষণা এবং আপনার আনুগত্যের শপথ নিয়েছি। যে আল্লাহ আপনাকে তার রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, সেই আল্লাহর শপথ! আপনি যদি সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেন, ‘আমরা তা-ই করব।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যে ব্যক্তি আপনার সঙ্গে যুদ্ধ-সংগ্রামে পেছনে থাকবে। হতে পারে আল্লাহ তাআলা আমাদের মধ্য দিয়ে আপনাকে এমন কিছু (সাফলতা) দেখাবেন, যা আপনার চোখে আনন্দ ও শীতলতা বয়ে আনবে।’
আনসারদের নেতা ও মুহাজির সাহাবিদের নিরাপত্তা ও আতিথেয়তার দায়িত্বশীল হজরত সাদ ইবনে মুয়াজের সে ঘোষণাই সফলতার মুখ দেখেছিল।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে আনসারদের নেতা হওয়া যেমন ছিল দুঃসাধ্য ব্যাপার আবার তেমনি জীবনও ছিল হুমকির মুখে। শুধুমাত্র বিশ্বনবির ভালোবাসায় হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু আনসার সাহাবিদের নিয়ে সফলতার ঘোষণা দিয়ে এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল।
কুরাইশদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া এ কারণে চ্যালেঞ্জ ছিল যে, তারা ছিল রণসম্ভাবে সুসজ্জিত ও প্রশিক্ষিত বিরাট সৈন্য দল। সে তুলনায় ৩ গুনেরও কম সৈন্য নিয়ে বিশ্বনবির সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ আনসার সাহাবিদের দল।
হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু সে ঘোষণার সত্যতাই ঘটেছিল। মুসলমানরা পেয়েছিল এক সুন্দর বিজয়। যে বিজয়ে ইসলাম ও মদিনা রাষ্ট্র স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসায় ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু।
মহান আল্লাহ পাক মুসলিম উম্মাহকে সাহাবায়ে কেরামের মতো ইসলামকে হৃদয় থেকে সর্বোচ্চ ভালোবাসার তাওফিক দান করুন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাকে ভালোবেসে পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন ছুম্মা আমিন।
লিখেছেন —-
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব।
বিডিনিউজ ইউরোপ/২৩ নভেম্বর/ জই