ঝালকাঠিতে লঞ্চ ট্রাজেডির ঘটনায় পঞ্চম দিনে যুবকের ও কিশোরসহ দু’জনের ভাসমান মৃতদেহ উদ্ধার, অভিযান চলছে।
ঝালকাঠির লঞ্চ ট্রাজেডির ঘটনায় শুক্রবারের পর থেকে তিনদিন বিরতির পরে সোমবার থেকে ঘটনা স্থল ও আশেপাশের নদীতে লাশ ভেসে উঠতে শুরু করেছে। ঝালকাঠির বিশখালীর নদীর সাচিলাপুর নাম স্থান থেকে অজ্ঞাত কিশোর(১৩) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ২টার সময় ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে মৃত দেহ উদ্ধার করে এবং ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক মোঃ খলিলুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। এবং পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য হাজপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। কিশোরের শলীর অর্ধপোড়া ছিল এবং গায়ে কাল রং এর ছোয়েটার ও পরনে জিন্সপ্যান্ট ছিলো। এর পূর্বে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চ ট্রাজেডির ঘটনায় পঞ্চম দিনে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঝালকাঠির লঞ্চঘাট সংলগ্ন মাঝনদী থেকে অজ্ঞাত যুবকের (৩২) মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এই যুবকের মুখমন্ডল পোড়া ছিল এবং শরীলে অফ হোয়াইট শীতের পোশাক ছিল ও পড়নে জিন্সের প্যান্ট ছিল জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার ডি.এ.ডি শফিক । লাশটি ময়নাতদন্ত এর জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। মর্মে ঝালকাঠির থানার পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। এই নিয়ে ঝালকাঠিতে নিখোজ ৩ জনের লাশ উদ্ধার হল। মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া শিশু ও কিশোরের মৃতদেহের পরিচয় এই রিপোর্ট প্রেরনকালীন সময় পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। গতকাল সোমবার উদ্ধার হওয়া লাশ দুই পরিবারের মধ্যে টানাটানি চলছিল এবং পুলিশ শেষ পর্যন্ত মধ্য রাতে এই লাশটির নারায়নগঞ্জের শাকিল মোল্লা(৩৪) নিশ্চিত হয়ে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। শাকিল মোল্লা নারায়নগঞ্জের শফিউদ্দিন মোল্লার পুত্র ও পেশায় সে সহকারী বাবুচর্ী। লঞ্চ দুর্ঘটনার দিন ৩৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল এবং নিখোজ ৩ জনের উদ্ধারের পরে এই সংখ্যা স্থানীয়ভাবে ৪০ এসে দাড়ায়। এর বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা ও বরিশালে মৃতের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। সোমবার রাতে লঞ্চের তদন্ত কাজে ও আলামত সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা নিরিক্ষা করছে সিআইডি। সিআইডির এ.এস.পি পদ মর্যাদার অরিদ সরকারের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করছে। এদের মধ্যে একটি অংশ মৃতের আলামত সংগ্রহ করে নিখোজদের সঠিক পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার বিশেষজ্ঞ রয়েছে। এই দুর্ঘটনায় আগুনে পুরে অনেকের মৃতদেহ তার পরিবারের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। সেজন্যই এই টিমটি পুলিশকে সহযোগীতা করতে এসেছেন। উদ্ধারকৃত মৃতদেহগুলির শরীলে কমবেশী দগ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। ধারনা করা হয় শরীলে আগুন ধরে যাওয়ার পরে আগুন থেকে বাচার জন্য নদীতে ঝাপ দেওয়ার পর নিখোজ ছিল। পুলিশের কন্ট্রোল রুমের হিসেব অনুযায়ী নিখোজ ব্যাক্তিদের আত্মীয় স্বজন ৪১ জনের তালিকা রেখেছে।
অন্যদিকে লঞ্চ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তর পক্ষ থেকে দায়িত্ব অবহেলার জন্য মৃত্যু ঘটনায় জন্য দায়ী করে লঞ্চ মালিক হামজা লাল শাহকে এজহারনামীয় প্রধান আসামী ও লঞ্চ স্টাফদের মধ্য ৭ জনকে এজহারভুক্ত আসামী করে ঝালকাঠির থানায় সোমবার মধ্য রাতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলায় এজাহারনামীয়দের মধ্যে রয়েছে মাস্টার রিয়াজ শিকদার ও মাস্টার মো: খলিল, ড্রাইভার মো: মাসুম ও মো: কালাম, সুকানী আনোয়ার হোসেন ও আহসান এবং কেরানী মো: কামরুলকে এজাহার নামীয় আসামী করা হয়েছে। আরও ১৫-২০ জন লঞ্চ স্টাফদের মধ্যে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। ঝালকাঠি থানার এস.আই নজরূলকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকার বকসনানগর এলাকার খলিলুর রহমানের পুত্র মনির হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছে। লঞ্চ ট্রাজেডির ঘটনায় একই পরিবারের তার নিখোজ বোন তাসলিমা আক্তার (৩০), তাসলিমার বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মিম (১২) ও সুবর্না আক্তার তানিয়া ( ৮) ও তাসলিমার ভাতিজা জুনায়েদ ইসলাম বায়েজিদ (২০) নিখোজ রয়েছে। এরা এই লঞ্চযোগে একসঙ্গে বরগুনায় তাসলিমা আক্তারের শ্বশুরবাড়ী যাচ্ছিল।
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/২৯ ডিসেম্বর/ জই