শীতের শুরুতেই জমে উঠেছে ভোলার বিভিন্ন হাটবাজারে খোলা পীঠার দোকান
হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে আসছে শীত। আসছে পিঠাপুলির দিন। কিন্তু ঋতু ধরে পিঠা খাওয়ার তর যেন সইছে না ভোলাবাসীর। শীতের আগেই তাই দোকানিরা বসছেন পিঠার ঝাঁপি খুলে। বিভিন্ন হাটবাজারের মোড়ে মোড়ে দেখা যাচ্ছে অল্পস্বল্প করে বসতে শুরু করেছে পিঠার দোকান। সেসব দোকানে এখনো হরেক পদের পিঠা পাওয়া না গেলেও পাওয়া যাচ্ছে চিতই পিঠা। শীতের মৌসুমে পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে চিতই পিঠার দোকান বসে।
এবার সেসব দোকান কিছুটা আগেই বসতে শুরু করেছে। কখনো দেখা যায় ভ্যানের ওপর সাজানো ছোট ছোট চিতই পিঠা। রংবেরঙের সে ভর্তা দেখলেই জিব ভরে ওঠে জলে। আর ছোট ছোট মেলামাইনের বাটিতে থরে থরে সাজানো চিনাবাদাম, শর্ষে, শুকনা ও কাঁচা মরিচ, চাপা শুঁটকি, চিংড়ি, শিম আর আলু ভর্তা। লাল, সবুজ, হালকা হলুদ, খয়েরি—কোন রং নেই সেখানে! দেখেই মনে হয় কোনো ওস্তাদ শিল্পী ক্যানভাসে রং চড়ানোর আগে রঙিন প্যালেট সাজিয়ে রেখেছেন। রংবেরঙের সে ভর্তা দেখলেই জিব ভরে ওঠে জলে। গরম গরম চিতই পিঠার সঙ্গে ঝাল-মিষ্টি-নোনতা স্বাদের ভর্তা খাওয়ার জন্য আনচান করে ওঠে মন।
ভ্যানের নিচে গ্যাস সিলিন্ডারের ওপর লাগানো চার বার্নারের দুটি সেটে চলছে পিঠা ভাজার কাজ। একেবারে গরমাগরম পিঠা তুলে রাখা হচ্ছে ভ্যানের ওপরের ডিশে। যার যতখানা পিঠা খাওয়ার ইচ্ছা, তিনি ততখানা পিঠা নিয়ে খাচ্ছেন। সঙ্গে আছে ইচ্ছেমতো ভর্তা খাওয়ার স্বাধীনতা। চিতই পিঠা। সঙ্গে আছে ইচ্ছে মতো ভর্তা খাওয়ার স্বাধীনতা চিতই পিঠা। খেতে খেতেই কথা হলো ভোলার পীঠা বিক্রেতা এনামুলের সঙ্গে। তিনি তখন জার থেকে জগে পানি ভরছিলেন। পিঠা ভাজছিলেন তাঁর সহকারী সুমন। তিন বছর ধরে এনামুল পিঠা বিক্রির মৌসুমি কাজ করেন। এখনো যেহেতু পুরোপুরি শীত শুরু হয়নি, তাই বিক্রি কিছুটা কম। জানতে চাইলাম, প্রতিদিন এখন কত কেজি আটার পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। জানালেন, ১৫-২০ কেজি আটার পিঠা বিক্রি হচ্ছে এখন। আর পুরোপুরি শীত পড়লে? এনামুল একটু হিসাব করে জানালেন, প্রতিদিন গড়ে ১৫ কেজি চালের আটার চিতই পিঠা বিক্রি হয় শীতের দিনগুলোতে। সে হিসাবে এনামুল শীতের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার টাকার চিতই পিঠা বিক্রি করেন। শীত পড়ার আগে মানুষের ভর্তা-চিতই খাওয়ার এ আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন এনামুল। তবে এটাও মনে করেন, পিঠা খাওয়া ও বিক্রি করার এই প্রক্রিয়া আরও স্বাস্থ্যকর করে তোলা উচিত। কিন্তু কীভাবে সেটা করবেন, তার হদিস তিনি পাচ্ছেন না।
শীতকালে রাস্তার মোড়ে মোড়ে চিতই পিঠার দোকান আমাদের স্ট্রিট ফুডের জগৎকে বর্ণিল করে তোলে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার মূল আকর্ষণ হরেক পদের ভর্তা খাওয়ার অবারিত সুযোগ। প্রতিবার একটি চিতই পিঠা নিলেই আপনি পরিমাণমতো ভর্তা নিতে পারবেন একাধিক পদের। ভোজনরসিকেরা সে সুযোগ ছাড়েন না। আর সে জন্যই বোধ হয় চিতই পিঠার দোকানদারেরাও ভর্তা রাখেন একাধিক পদের। ছোট্ট পিঠার দোকানে এনামুলের সহযোগী সুমন যেমন বলছিলেন, ‘ডাবল, ট্রিপল, ফোর্তপোল ভর্তা আছে। নিয়া খান মামারা।’
বিডিনিউজ ইউরোপ/২০ নভেম্বর/ জই