চলতি বাজেটে শিক্ষার ওপর ১৫% ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : ছাত্র ফেডারেশন
অর্থমন্ত্রী চলতি বাজেটে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% কর আরোপের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। কাল বিলম্ব না করে ১৫% করারোপের এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ১৫% কর আরোপের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।
ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, অবৈধ সরকারকে শিক্ষার্থীরা কেন বাড়তি ভ্যাট দিবে? শিক্ষা ব্যয়ের কত ভাগ সরকার বহন করছেন? বাংলাদেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি, নাকি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি? বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরোপের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে ঝরে পড়বে।
নেতৃবৃন্দ জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। টাকার অংকে বরাদ্দ সামান্য বেড়েছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ইত্যাদির হিসাব ধরলে বরাদ্দ কমেছে অনেক।
করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশে শিক্ষার যে দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটা মোকাবেলার জন্য উচিত ছিল গত বছরের চেয়ে শিক্ষাখাতে ন্যূনতম দ্বিগুন বরাদ্দ দেয়া। অথচ সরকার উল্টো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করছে। এতে শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগী হবেন শিক্ষার্থীরা। সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করছে, এই প্রস্তাব পাশ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি পয়সা নেবার জন্য উঠেপড়ে লাগবে। ইতোপূর্বে দেখা গেছে, বাড়তি ব্যয়ের বোঝা সব সময় শিক্ষার্থীদেরকেই বহন করতে হয়।
শাসকগোষ্ঠী ৫০ বছরেও দেশের ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীর জন্য সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন নি। তারা শিক্ষার ব্যয় ভার সম্পূর্ণটাই শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করে চলেছেন। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কোনরূপ দায়িত্ব তো নেয়ই নি, বরং এই ভোট-ডাকাত, লুটেরা সরকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘাটতি বাজেটের টাকা তুলতে নীল নকশা আঁকছেন।
সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষা ব্যয় কীভাবে কমানো যায় তার উপায় খুঁজে বের করুন। চুরি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার বন্ধ করে দেশের শিক্ষার্থী তথা ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভাবুন। শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার ধান্দাকে উস্কে দিবেন না। শিক্ষা কোন পণ্য নয়, শিক্ষা সবার অধিকার।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা দাবি করছি, মোট জিডিপির ৮% শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান বাজেটে শিক্ষাখাতে জিডিপির ২ থেকে ২.২ পার্সেন্ট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা আর গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে আগায় নি।
সরকার ফ্যাসিস্ট না হলে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ওপড়ে ভ্যাট আরোপের দুঃসাহস দেখাতো না। তবে ছাত্রসমাজ কিন্তু তার সাহস দেখিয়েছে ২০১৭ সালের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনেই। অতীত থেকে শিক্ষা না নিলে এর পরিণাম সরকার সামাল দিতে পারবে না। সরকার ছাত্রদের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে ছাত্রসমাজ ও বসে থাকবে না।
বার্তা প্রেরক
এম এইচ রিয়াদ
দপ্তর সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/৪জুন/জই