অস্ট্রিয়ায় করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির চরম অবনতি
শুক্রবার অস্ট্রিয়ায় পুনারায় পুরোপুরি লকডাউনের ঘোষণা আসতে পারে ! অস্ট্রিয়ায় আবারও পুরো লকডাউন হুমকির সম্মুখীন?
অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে চলমান “লকডাউন লাইট ” কার্যত ব্যর্থ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সপ্তাহের কর্ম দিবসে প্রতিদিনের সংক্রমণ ৮,০০০ হাজারের কাছাকাছি। অস্ট্রিয়ার মতো একটি সুশৃঙ্খল দেশের জন্য এটি একটি ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান। সরকারী সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে আগামী শুক্রবার যে ৭ টি নতুন নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ আসছে তা আসলে এক ধরনের অঘোষিত সম্পূর্ণ লকডাউন।
করোনার দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাবে গত ৩১ শে অক্টোবর অস্ট্রিয়ান সরকার ৩ নভেম্বর থেকে সমগ্র দেশে “লকডাউন লাইট” ঘোষণা করে। রাত ৮ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত কারফিউ জারির ঘোষণা দেয়। কিন্ত তা সত্ত্বেও করোনার সংক্রমণ হুর হুর করে বেড়েই চলেছে। অস্ট্রিয়ার সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা এই সপ্তাহ সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। সরকার এই সপ্তাহটিকে “সিদ্ধান্তের সপ্তাহ” হিসাবে ঘোষণা করেছে।
সরকারের নীতি নির্ধারকরা ভেবেছিলেন লকডাউন লাইটের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই সংক্রমণ কমতে শুরু করবে কিন্ত বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। বলা হচ্ছে “লকডাউন লাইট” যদি সফল হত তাহলে এর কিছুটা আভাস এখনই দেখা যেত। সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে এটি না ঘটলে “পুনরায় সমন্বয়” করতে হবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গণ্ডি না ভাঙতে এবং হাসপাতালের সক্ষমতা শেষ হওয়ার পূর্বে এখন সম্পূর্ণ লক ডাউনের বিকল্প নাই । সরকারের নীতি নির্ধারকরা এখন নতুন করে ৭ টি বিধিনিষেধের কথা ভাবছে। নিম্নে সেই ৭ টি বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা করা হল –
১. কারফিউ বর্তমানে আরোপিত কারফিউ রাত ৮ টা থেকে ভোর ৬ টার পরিবর্তে পূর্বের মতোই ২৪ ঘন্টা। যেমন শুধুমাত্র পেশাদারি কাজ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য কেবল প্রতি পরিবার থেকে শুধুমাত্র একজন সদস্য ঘর থেকে বের হতে পারবে। যারা নিজেরা চলতে পারে না, তাদেরকে সাহায্যের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া। বাসায় থেকে বিরক্তি আসলে নিজের বাড়ির সামনে একা হাটাহাটি করা অথবা কুকুর নিয়ে হাটার অনুমতি ছিল। ২.স্কুল বন্ধঃ বর্তমানে স্কুল বন্ধ নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। কিন্ত করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাই স্কুল বন্ধের ঘোষণা করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নাই। ৩. বাণিজ্য বন্ধঃ গত মার্চের মতো, সুপারমার্কেটগুলি বাদ দিয়ে অন্যান্য দোকান এবং শপিং কেন্দ্রগুলি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে ৪. সীমান্ত নিয়ন্ত্রনঃ যদি গত বসন্তের মতই কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আবার ফিরে আসে, অস্ট্রিয়ায় প্রবেশের সময় বিশাল ট্র্যাফিক জ্যামগুলি আবার অনিবার্য। সর্বাধিক নাটকীয় দিনে, ভ্রমণকারীরা ফ্রিওয়েতে লাইনে অপেক্ষা করে পুরো দিন কাটাত। নেতিবাচক পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল নির্বিশেষে আপনি আবার যোগাযোগের ফর্ম এবং জ্বর পরিমাপের আশা করতে পারেন। ৫. হোম অফিসঃ হোম অফিস সক্ষম করার জন্য সুপারিশটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান রয়েছে – এর ফলে এখন ন্যায়সঙ্গত ক্ষেত্রে সাধারণ বাড়ির অফিস নিয়ন্ত্রণের ফলাফল হতে পারে। যেখানে এটি সম্ভব নয়, সাধারণ মুখোশের প্রয়োজনীয়তার মতো পদক্ষেপগুলি চালু করা যেতে পারে; ন্যূনতম দূরত্বের সাথে সম্মতি রেখে। ৬. ভিজিট নিষিদ্ধঃ মজা করার জন্য বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিতজনদের সাথে দেখা “লকডাউন লাইট” দিয়ে ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ, তবে এখন সাধারণ পরিদর্শন নিষেধাজ্ঞাগুলিও থাকতে পারে – উদাহরণস্বরূপ পুরানো লোক এবং নার্সিংহোম এবং হাসপাতালে। কারণ: বিশেষত দুর্বল দল হিসাবে, বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সবকিছু করা হবে। ৭. কাজের সময়ঃ (Zivildienst) নাগরিক কর্মচারীরা যারা তাদের সেবা করেন তাদের যত্নের সুবিধার্থে আরও কিছু সময়ের জন্য আরও বেশি করে স্থাপন করা যেতে পারে। অন্যদিকে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে নিয়োগের নিরস্ত্রীকরণ বাড়ানো যেতে পারে। ইতিমধ্যে নাগরিক কর্মচারীদের সরকার পুনরায় জরুরী ভিত্তিতে ডেকে পাঠিয়েছেন।
অস্ট্রিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর জাতীয় সামরিক পরিষেবার বাধ্যতামূলক বিকল্প পরিষেবা হ’ল সিভিলি সার্ভিস (জার্মান, “সিভিলিয়ান সার্ভিস” অনুবাদকৃত শব্দ, তবে”বাধ্যতামূলক বেতনভুক্ত সম্প্রদায় পরিষেবা” আরও প্রাসঙ্গিক সমতুল্য)। আনুষ্ঠানিকভাবে Zivildienstleistender (ZDL) বা Zivildiener বলা হয় তাদের জিভি বলা হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বেসামরিক লোকজনকে দেশের দুর্যোগময় মুহুর্তে সরকার তলব করে থাকেন। এরা সাধারণত হাসপাতাল, যুব সংগঠন, নার্সিংহোমস, উদ্ধার পরিষেবা, জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা এবং প্রতিবন্ধীদের যত্নের মতো সামাজিক পরিষেবাদিতে কাজ করে থাকেন।
বিডিনিউজ ইউরোপ/১৩ নভেম্বর/ বার্তা সম্পাদক