অস্ট্রিয়ায় ১৯ শে মে থেকে খুলছে হোটেল রেস্টুরেন্ট আর ১৭ ই মে থেকে স্কুল
আজ অস্ট্রিয়ার সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে দেশের অংশীদারদের এক বৈঠকের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ একথা বলেন।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন,অস্ট্রিয়ান সরকার আজ শুক্রবার বেশ কয়েকটি লকডাউন ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে যা মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শিথিল করা হবে। হোটেল এবং রেস্তোঁরাগুলিকে আবার চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে, তবে কিছু ব্যবস্থা রাখা বাকি রয়েছে। দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ থাকার পর অস্ট্রিয়ায় পুনরায় ১৯ মে থেকে হোটেল এবং রেস্তোঁরাগুলিকে খোলার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অস্ট্রিয়ায় যাদের করোনার উভয় ডোজ গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে তাদের জন্য করোনার গ্রীন পাসের প্রবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে গ্রীন পাস তৈরীর কাজ এখনও চলছে।
এপিএ আরও জানিয়েছেন আগামী মঙ্গলবার ভিয়েনার মেয়র ও রাজ্য গভর্নর ভিয়েনার লকডাউন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানাবেন। অবশ্য সম্ভবত সিদ্ধান্তের পূর্বে তিনি সোমবার ভিয়েনার বিশেষজ্ঞদের সাথে পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে মিলিত হবেন। বর্তমানে ভিয়েনা ও লোয়ার অস্ট্রিয়ায় আগামী ২ মে পর্যন্ত লকডাউন বলবৎ আছে। অবশ্য লোয়ার অস্ট্রিয়ার গভর্নর অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছেন যে,লোয়ার অস্ট্রিয়া তাদের লকডাউনটি আর বর্ধিত করবে না।

এপিএ জানান,আজ ভিয়েনার সিটি হলে মেয়র মিখাইল লুডভিগ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,ভিয়েনা সহ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় এখনও প্রস্থান নিষেধাজ্ঞা এবং দোকানপাট বন্ধ সহ কঠোর লকডাউন চলমান রয়েছে। মেয়র শুক্রবার বিকেলে টাউন হলে তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন,তিনি খোলার জন্য তিনিও নীতিগতভাবে একমত, তবে তিনি সতর্কতার সাথে এগিয়ে যেতে চান। সুতরাং করোনার ব্যবস্থাগুলির একটি বর্ধন পুরোপুরি টেবিলের আলোচনার বাহিরে নয়।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, ভিয়েনা আগামী ২ মে থেকে “নরম” লকডাউনে ফিরে আসতে পারে। ভিয়েনা খুব শীঘ্রই বিধিনিষেধ থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব না,কেননা ভিয়েনায় করোনার সংক্রমণের বিস্তার এখনও আশঙ্কাজনক। তবে মেয়র বলেন তিনি কেবল স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবেন। সুতরাং এটি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা যায় না যে, বর্তমান চলমান লকডাউন ও বিধিনিষেধের পদক্ষেপগুলি বাড়ানো হবে। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটগুলির সংখ্যাগুলি এখন আরও ভাল, “তবে দুর্ভাগ্যক্রমে এখনও বিপদজনক অবস্থাতেই আছে।”
তিনি আরও জানান,ভিয়েনায় এখনও নতুন ভাইরাসের রূপান্তর রয়েছে যার জন্য এটি প্রকৃতপক্ষে কতটা আক্রমণাত্মক তা এখনও স্পষ্ট নয়। ভিয়েনায় বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনার পরই আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে জানান তিনি। মেয়র ইতিমধ্যেই বলেছিলেন যে,ফেডারেল সরকার মে মাসের মাঝামাঝি খোলার যে, পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি এই ব্যাপারে ভিয়েনার করোনার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এগুবেন।
ভিয়েনায় আরও সীমাবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়া প্রশ্নটির বাইরে নয়। লুডভিগ অবশ্য যোগ করেছেন যে, তিনি অস্ট্রিয়ায় সর্বাধিক অভিন্ন বিধির পক্ষে । তবে খুব শীঘ্রই খোলার মাধ্যমে পর্যটনকালে গ্রীষ্মের মৌসুমকে ঝুঁকিপূর্ণ করা উচিত নয়, উদাহরণস্বরূপ, মেয়র সতর্ক করেন: “খুব দ্রুত জিনিস খোলার চেয়ে খারাপ আর কিছু হবে না।” সর্বোপরি, বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন এগুলি একই সময়ে হওয়া উচিত নয়,যাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি না পায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমিও খোলার পক্ষে তবে ধীরে ধীরে, টেকসই এবং বুদ্ধিমানভাবে পরিচালিত খোলার পক্ষে। তিনি আশা করে বলেন,১৯ মে এখনও অনেক দূরে তাই আশা করছি এরই মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২,৩২৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ জন।
রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৪৯০ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৪১৩ জন,NÖ রাজ্যে ৩৮৫ জন, Steiermark রাজ্যে ৩৫৭ জন, Tirol রাজ্যে ২০৬ জন,Vorarlberg রাজ্যে ১৬৬ জন,Kärnten রাজ্যে ১৩০ জন,Salzburg রাজ্যে ১২৯ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৫৩ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন।
আজ অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সমগ্র দেশে করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ৬৯,৮০৯ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রদান সম্পন্ন করা হয়েছে ২৬,৯৩,৭৭৫ ডোজ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন যে,আগামী মে মাসে অস্ট্রিয়ায় প্রতিদিন ১ লক্ষ ৩০ হাজার করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় অনুশীলনরত চিকিৎসক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,০৪,৮২৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১০,০৫৫ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৫,৬৮,২১৩ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৬,৫৫৫ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৫১৭ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৮৬৬ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/২৩এপ্রিল/জই