সমগ্র অস্ট্রিয়া পুনরায় করোনার সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লাল জোনে
ভিয়েনার সাথে পূর্বাঞ্চলের NÖ ও বুর্গেনল্যান্ড রাজ্যও লকডাউন ১১ ই এপ্রিল পর্যন্ত করায় সেবাস্তিয়ান কুর্জ ও রুডল্ফ আনস্কোবারের অভিনন্দন প্রকাশ।
অস্ট্রিয়ার করোনা কমিশন তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে সমগ্র অস্ট্রিয়াকে পুনরায় করোনার লাল জোন ঘোষণা করেছেন।
উল্লেখ্য যে, গত ৩ সপ্তাহ পূর্বে সুইজারল্যান্ড ঘেষাঁ অস্ট্রিয়ার পশ্চিমের রাজ্য Vorarlberg কে লাল থেকে কমলা স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের সাথে সাথে অন্যান্য রাজ্যের করোনার নতুন সংক্রমণ ক্রমশ উদ্বেগজনক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় অস্ট্রিয়ার করোনা কমিশন সমগ্র দেশকেই পুনরায় করোনার সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ “লাল জোন “ঘোষণা করেছেন।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার এক পৃথক পৃথক বার্তায় পূর্বাঞ্চলের লকডাউনে ভিয়েনার সাথে NÖ ও Burgenland রাজ্যও তাদের লকডাউন আগামী ১১ ই এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেবাস্তিয়ান কুর্জ বলেন,এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হয়েছে,যা করোনার সংক্রমণ বিস্তার রোধে কার্যকর হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবারও তাদের লকডাউন বর্ধিত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি সকলকে করোনার যথাযথ বিধিনিষেধ মেনে চলার বিশেষ অনুরোধ করেছেন।
আজ ১লা এপ্রিল থেকে অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের ৩ টি রাজ্য ভিয়েনা,লোয়ার অস্ট্রিয়া ও বুর্গেনল্যান্ডে ১১ ই এপ্রিল পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন শুরু হয়েছে। আজ লকডাউনের প্রথমদিনে রাজধানী ভিয়েনার রাস্তায় অনেক মানুষ ও গাড়ির চলমান থাকলেও সকলকেই সতর্কতামূলক অবস্থায়ই দেখা গেছে। এই লকডাউনের সময় সুপার মার্কেট,বাজার,ফার্মেসী, পোস্ট অফিস, পেট্রোল পাম্প, ডাক্তারের চেম্বার, সিগারেটের দোকান এবং কনস্ট্রাকশন কাজ খোলা রয়েছে। তাছাড়া শপিংমল সহ বাকি সব দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্থগিত রয়েছে। ভিয়েনার অধিকাংশ সরকারী ও বেসরকারী অফিসের হোম অফিস চালু করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ইস্টারের ছুটি চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ৯ ই এপ্রিলের পর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় Distance Learning বা অনলাইন ক্লাশ শুরু করা হবে।
ভিয়েনার জনপ্রিয় ফ্রি পত্রিকা “Heute” তাদের অনলাইন প্রকাশনায় জানিয়েছেন যে, করোনা কমিশন পুনরায় সমগ্র দেশকেই লাল জোনে স্থানান্তরিত করেছে। কেননা বর্তমানে সমগ্র দেশেই ক্রমশ করোনার সংক্রমণের বিস্তার অব্যাহত থাকায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর পুনরায় প্রচন্ড চাপ পড়ছে। গতকাল বুধবার অস্ট্রিয়ায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ বেডের শতকরা ২৬.৯% শতাংশ পূর্ণ হয়ে গেছে। সংক্রমণের বিস্তার যদি এইভাবেই বাড়তে থাকে তাহলে আগামী সপ্তাহেই তা শতকরা ৩৩% শতাংশ হয়ে যাবে।
পত্রিকাটি আরও জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের ৩ টি রাজ্য ভিয়েনা, লোয়ার অস্ট্রিয়া এবং বুর্গেনল্যান্ডে ইতিমধ্যেই কররনার রোগীদের দ্বারা আইসিইউ বেডের শতকরা ৩৩% শতাংশের উপরে উঠে গেছে। বর্তমানে সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৮৮% শতাংশই বৃটেনের মিউটেশন ভাইরাস B.1.1.7 দ্বারা সংক্রমিত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনৈক মুখপাত্র।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন যে,বর্তমানে অস্ট্রিয়ার ৯৬ টি জেলার মধ্যে মাত্র ৩ টি ব্যতীত সকল জেলাতেই প্রতি ১,০০,০০০ লাখ জনপদে সংক্রমণ ১০০ জনের উপরে। ইইউর নির্দেশনা অনুযায়ী কোন জেলা বা অঞ্চলে প্রতি ১,০০,০০০ লাখ জনপদের সংক্রমণ ৫০ বা তার উপর হলেই তাকে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে গণ্য করতে বলা হয়েছে। তাই সে হিসাবে বর্তমানে সমগ্র অস্ট্রিয়াই করোনার অতি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার গতকাল এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন যে,আগামী সোমবার ৫ ই এপ্রিল সরকার প্রধানের কার্যালয়ে পুনরায় দেশের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ, ৯ টি রাজ্যের গভর্নর এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের প্রধানের সাথে এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জাতীয় সংবাদ মাধ্যমকে ঈঙ্গিত দিয়েছেন যে,সম্ভবত সোমবারের বৈঠকের পর পুনরায় সমগ্র দেশেই লকডাউন ঘোষণা করার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়াও অস্ট্রিয়ান করোনা কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন সংক্রমণের এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলিতে অস্ট্রিয়ায় করোনার দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ৪,০০০ হাজারের ঘরে উঠে যাবে।
আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৩,৩৬৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ১,০৩৮ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৭০৯ জন,OÖ রাজ্যে ৫০১ জন,Steiermark রাজ্যে ২৮১ জন, Tirol রাজ্যে ২৫৩ জন,Kärnten রাজ্যে ১৯৯ জন,Salzburg রাজ্যে ১৮৮ জন, Burgenland রাজ্যে ১০২ জন এবং Vorarlberg রাজ্যে ৯২ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে দেশে এই পর্যন্ত মোট ১৬,৪১,৩৩২ ডোজ করোনার ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৪৯,৫৯২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৯,৩৬৮ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৫,০৩,৭২৯ জন। বর্তমানে দেশে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৬,৪৯৫ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আইসিইউতে আছেন ৫৩১ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,২৯৭ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/২এপ্রিল,/জই