ফাইজারের পর আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডার্নার উদ্ভাবিত এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাকসিনকে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স অ্যাজেন্সি। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে এক টুইট বার্তায় মডার্না উদ্ভাবিত করোনার ভ্যাসকিনকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স অ্যাজেন্সি। ফলে এখন থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো চাইলে ফাইজারের পাশাপাশি মডার্নার ভ্যাকসিনও ব্যবহার করতে পারবে।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মডার্না উদ্ভাবিত এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাকসিনকে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োগের অনুমতি দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডা এবং ইসরায়েলেও ছাড়পত্র পেয়েছে এ ভ্যাকসিন। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, চূড়ান্তভাবে করোনা নির্মূল করতে হলে কোনও একটি পপুলেশনের শতকরা ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধে কার্যকরি অ্যান্টিবডির উপস্থিতি থাকতে হবে। এরই অংশ হিসেবে তিনি ধাপে ধাপে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে কমপক্ষে ৪৫০ মিলিয়ন মানুষকে ভ্যাসকিনেশনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইতোমধ্যে ফাইজার, মডার্না, জ্যানসেন ফার্মাসিউটিক্যাল এনভি, কিউরভ্যাক, অ্যাস্ট্রোজেনকা, সানোফি, গ্ল্যাক্সোস্মিথ ক্লাইনসহ ভ্যাকসিন সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ৩০০ মিলিয়ন ডোজের টিকা ক্রয়ের অগ্রিম চুক্তি স্বাক্ষর করে রেখেছে। এর অংশ হিসেবে ফাইজার এবং বায়োএনটেকের কাছ থেকে ১০০ মিলিয়ন এবং মডার্নার কাছ থেকে ১৮০ মিলিয়ন ডোজ টিকা ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ফাইজারের মতো মডার্নারও দাবি, তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি করোনা প্রতিরোধে ৯৪.৫ শতাংশ কার্যকর। তবে ফাইজার এবং বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণ করতে মাইনাস ৯৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার প্রয়োজন, সেখানে সাধারণ রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রায় অর্থাৎ ৩৫.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৪৬.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এ এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণ করা সম্ভব।
এদিকে ভ্যাকসিন কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে ইইউর বিভিন্ন দেশে নানা ধরণের সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপের অন্যতম প্রতিপত্তিশালী দেশ ফ্রান্স গত পাঁচ দিনে মাত্র ৫৬১ জন মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে, ফলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মাঝে। অন্যদিকে এখনও ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করতে পারে নি ইউরোপের আরেক দেশ নেদারল্যান্ডস। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর মাঝে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে জার্মানিতে। আট কোটি জনসংখ্যার এ দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনার টিকা নিয়েছেন আড়াই লক্ষের বেশি মানুষ, শতকরা হিসেবে জার্মানিতে ভ্যাকসিনেশনের হার ০.২৩। ইইউর অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রিয়াতে এখন পর্যন্ত ৬০০০, গ্রিসে ৩০০১, রোমানিয়াতে ১৩২০০, বুলগেরিয়াতে ৪৭৩৯, ইতালিতে ৭৯,০০০ এবং ডেনমার্কে ৪৫৮০০ জন করোনার টিকা নিয়েছেন।
জার্মানিভিত্তিক ভ্যাসকিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের সিইও উগুর শাহীন জানিয়েছেন, গত ২৭ ডিসেম্বর ইইউর দেশগুলো টিকা কার্যক্রম শুরু করলেও এখনও কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে। তিনি বলেন, “ইউরোপিয়ান কমিশনের উচিৎ যতো দ্রুত সম্ভব ফাইজারের পাশাপাশি মডার্না এবং অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রোজেনকা উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিনকে অনুমোদনের বিষয়ে কার্যকরি সিদ্ধান্তে আসা। অন্যথায় ভ্যাসিকন সরবারহকে কেন্দ্র করে বড় ধরণের সঙ্কটের সূচনা হবে এ সকল দেশগুলোতে।”
উগুর শাহীনের এ বক্তব্যের সাথে অনেকটা একমত পোষণ করেছেন যুক্তরাজ্যের চিফ মেডিকেল অফিসার ক্রিস হুইটি। তিনি বলেছেন, ” সেকেন্ড ওয়েভে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো ইউরোপের দেশগুলোতে ক্রমাগত করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে পর্যাপ্ত সক্ষমতার অভাবে চাহিদা মোতাবেক ভ্যাকসিন সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরুরিভিত্তিতে ভ্যাকসিনের সরবারহ নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলোর উচিত অতি দ্রুত অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলোকে অনুমোদনের বিষয়ে কার্যকরি সিদ্ধান্তে আসা এবং দ্রুত ভ্যাকসিন সরবারহ নিশ্চিত করা।” যে কোনও ধরণের কালক্ষেপণ ব্রিটেনের মতো গোটা ইউরোপকে মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রিস হুইটি।
বিডিনিউজ ইউরোপ /৭ জানুয়ারি / জই