দেশ টিভির পরিচালক আরিফ হাসানের ৫০০ কোটি টাকা পাচার!বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি টেলি ভিশন চ্যানেল দেশ টিভির পরিচালক আরিফ হাসান। প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কানাডায় পাচার করেও কোনো রহস্যময় কারণে তিনি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। দুর্নীতি দম ন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরিফ হাসান ৩৩৫ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি করেছেন। দুদকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আরিফ হাসানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধা নে নেমে তার মালিকা ধীন হাসান টেলিকমের ৩৩৫ কোটি টাকার ঋণ জালি য়া তির তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া আরিফ হাসান, তার স্ত্রী এমিলি ফয়েজের নামে কানাডার টরন্টোর একটি বাড়ি কেনার তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। জাল-জালিয়াতি করে আয় করা টাকায় বাড়িটি কেনা হয়ে ছে। এর পাশাপাশি আরিফ হাসান ও তার বাবা আব দুল আজিজের নামে ১২৮ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থা বর সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।’
কে এই আরিফ হাসান?
আরিফ হাসানের জন্মস্থান কুমিল্লা। তার বাবার নাম আবদুল আজিজ এবং মায়ের নাম মালেকা পারভীন। ঠিকানা দু’টি হলো বাড়ি-১৮/এ, রোড-৪৪, গুলশান উত্তর, ঢাকা-১২১২ এবং অ্যাপার্টমেন্ট-বি-৩/ডি, বাসা-১৫, পুরাতন ডিওএইচএস, বনানী। পাসপোর্টে আরিফের জন্ম তারিখ হলো ১৯৭৪ সালে ২৭ জুন। তিনি যে পাসপোর্ট ব্যবহার করে কানাডা সফর করেন সেটির ইস্যুর তারিখ হলো ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর। দুদক সূত্র জানায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬ বার পাসপোর্ট পরিবর্তন করা আরিফ হাসানের জাল-জালিয়াতির আরও অনেক তথ্য আছে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর দুদক থেকে আরিফের মামলার বিষয়টি আর জানা যাচ্ছে না। কারন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এখন তোপের মুখে।
দেশ টিভি কাহিনী:
আওয়ামী লীগ আমলে অর্থাৎ ২০০৯ সালের মার্চে দেশ টিভি অন-এয়ারে আসে। আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী ও আসাদুজ্জামান নূরকে নামকাওয়াস্তে টিভির পরিচালক পদে নাম লিখিয়ে চ্যানেলটিকে একটি সরকার দলীয় প্রচারমাধ্যম হিসেবে দেখানোর চেষ্টা ছিল চতুর আরিফ হাসানের।
সর্বশেষ ২০২১ নতুন বিনিয়োগকারী হিসেবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বান্ধবী তৌফিকা আফতাবকে নির্বাহী চেয়ারম্যান করা হয়। দুদকের মামলা স্থগিত এবং আদালতের নির্দেশে ফ্রিজ থাকা ১৫ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সচল করার শর্তে নাকি তৌফিকাকে চেয়ারম্যান পদটি দেওয়া হয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তৌফিকা লাপাত্তা হয়ে গেলে নির্বাহী পরিচালক এবং চেয়ারম্যান দুটি পদই এখন আরিফ হাসানের।
আরিফের ঋণ জালিয়াতি:
ন্যাশনাল ব্যাংক মহাখালী শাখায় আরিফের মালিকাধীন হাসান টেলিকমের নামে ২৭৫ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি হয়েছে। ডাইরেক্ট হু হোম প্রকল্পের আওতায় ৪৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ওয়ার্ক পারমিটের বিপরীতে ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় ঋণের আবেদন করা হয়। ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর ব্যাংকের পর্ষদ সভায় হাসান টেলিকমের অনুকূলে ২৭৫ কোটি টাকার ৫ বছর মেয়াদি ওভারড্রাফট (ওডি) ঋণ অনুমোদন করা হয়। ২৯ নভেম্বর আরিফের ব্যাংক হিসাবে ১০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরে পুরো টাকা ১৯টি চেকের মাধ্যমে তুলে নেন আরিফ। একই বছরের ২ ও ৩ ডিসেম্বর যথাক্রমে ১০০ কোটি ও ৭৫ কোটি টাকা একইভাবে আরিফের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে চেকের মাধ্যমে ওই টাকাও তুলে নেন তিনি।
টরন্টোতে আরিফের বাড়ি কেনার কাহিনী:
আরিফ হাসান কানাডার অভিজাত এলাকায় যে বাড়িটি কিনেছেন তা বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে কেনা হয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, বৃহত্তর টরন্টোর নর্থ ইয়র্কের ৮২ হলিউড এভিনিউর বাড়িটি ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাফে নাদেরের কাছ থেকে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারে ক্রয় করেন দেশ টিভির পরিচালক আরিফ হাসান। পরে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বাড়িটির নতুন রূপ দেন তিনি। আরও জানা যায়, বাড়ি বেচাকেনার লিস্টিংয়ের (নথিভুক্ত) বাইরে প্রাইভেট ডিলিংয়ের (ব্যক্তিগত যোগাযোগ) মাধ্যমে নগদ অর্থে এটি কেনা হয়। বাড়ির মালিকানায় আরও দু’জনের নাম আছে; তারা হলেন আরিফ হাসানের স্ত্রী এমিলি ফয়েজ ও সুফিয়া চৌধুরী নামে অন্য এক মহিলা।
চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলিং:
মিথ্যা সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে আরিফের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশ টিভি’র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হাসান নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের হুমকি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে সরাসরি নির্দিষ্ট অংকের টাকা দাবি করছেন।
দাপুটে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আরিফ!
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উত্থান হওয়া আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, দূর্নীতি ও টাকা পাচারের এত্তসব অভিযোগ থাকলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকে তিনি এক শক্তিধর মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার দাপটে এখন বাংলাদেশের মিডিয়া জগৎ কম্পমান। সূত্র -দেশে বিদেশে টিভি
bdnewseu/23October/ZI/crime