• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ধারাভাষ্যে সাকিব কে নিয়ে তামিমের যত কথা ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা; পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেফতার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুই মাসের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যৌথ-বাহিনীর অভিযানে কল্লাকাটা মিজান’সহ ৭ সন্ত্রাসী আটক পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দু’জনকে কুপিয়ে জখম, দুই পক্ষের ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি অস্ট্রিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ অস্ট্রিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার কবলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে বছরে লোকসান ৬৬ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে মার্কিন প্রতি‌নি‌ধিদলের সাথে আলোচনা গ্রিসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ ঘোষণা
বিজ্ঞপ্তি
প্রিয় পাঠক আমাদের সাইটে আপনাকে স্বাগতম এই সাইটি নতুন ভাবে করা হয়েছে। তাই ১৫ই অক্টোবর ২০২০ সাল এর আগের নিউজ গুলো দেখতে ভিজিট করুন : old.bdnewseu24.com

দুটি সেতুর একই গল্প মালদ্বীপে চীন ও ভারতের প্রভাব বিস্তারের লড়াই

নিজাম উদ্দিন ন্যাশনাল ডেক্স
আপডেট : সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০

দুটি সেতুর এক গল্প: মালদ্বীপে চীন ও ভারতের প্রভাব বিস্তারের লড়াই

মালদ্বীপের রাজধানী মালি এবং দেশটির আন্তজার্তিক বিমানবন্দরকে সংযুক্ত করতে ভারত মহাসাগরের প্রাণকেন্দ্রে ২.১ (১.৩ মাইল) কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করেছিল চীন। এই সেতুকে চীন ও মালদ্বীপের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়। প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এ সেতু নির্মিত হয় বেইজিংয়ের অর্থায়নে। এ সেতু সাদা বালির সমুদ্র সৈকত এবং ফিরোজা রংয়ের উপহ্রদের দেশ মালদ্বীপে চীনা বর্ধমান প্রকল্পগুলো একটি। তবে মালদ্বীপে চীনের এই বিস্তৃত পদচিহ্ন অন্য প্রতিবেশি দেশ ভারতকে কিছুটা অস্থির করে তুলে। ভারত তার ঐতিহ্যগত প্রভাব হারানো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি আঞ্চলিক সীমানা বিরোধের জেরে চীন-ভারতের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা কাজ করছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার কম উন্নত দেশগুলোতে উন্নয়ন কাজে সহায়তা করে চীন প্রভাব ফেলতে চাইছে।
সিএনএন এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে।

তবে চীনের এই ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে ভারতও ব্যাপক প্রয়াস চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে এবছরের আগস্টে ভারত মালদ্বীপে অন্য একটি সেতু নির্মাণে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এটি হবে মালদ্বীপে নির্মিত ‘বৃহত্তম বেসামরিক অবকাঠামো প্রকল্প’। ৬.৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু যা মালেকে কাছের তিনটি দ্বীপের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এই প্রকল্প চীনের তৈরি করা সেতুটির দৈর্ঘ্য এবং দামকে ছাপিয়ে যাবে খুব সহজে। চীনের তৎপরতায় যেভাবে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে ভারতের, তা ঠেকাতে মূলত উদ্যোগী হয়েছে দেশটি। ভারত এজন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এই অবকাঠমো নির্মাণ দৌড় প্রতিযোগিতা ভারত এবং চীনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আরেকটি দিক। সাম্প্রতিক সময়ে হিমালয় অঞ্চলে বিতর্কিত সীমান্তগুলো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছে। ভারত মহাসাগরেও দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। ভারতের মহাসাগরে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লি।

আবদুল্লাহ ইয়ামিন ২০১৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর মালদ্বীপ নয়াদিল্লি থেকে সরে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ট করে। দ্বীপ প্রধান দেশটি তাদের প্রবাল দ্বীপগুলোর আরো উন্নয়নের জন্য চীনের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলার তহবিল পেয়েছিল। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইয়ামিনের বিস্ময়কর পরাজয়ের পর ভারত পুনরায় ঐতিহ্যবাহী মিত্র সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছে। চীন ঐ সময়ে মালদ্বীপকে ১.৫ বিলিয়ন থেকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য করেছিল।

নয়াদিল্ল ভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো মনোজ জোশী বলেন, ভারতের জন্য চীনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার অনেক বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, মালদ্বীপ আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সিকিউরিটি প্রভাবিত করতে মালদ্বীপে ভারত কিছু করতে পারে না, তবে ভারতীয় সিকিউরিটি প্রভাবিত করতে মালদ্বীপে চীন অনেক কিছু করতে সক্ষম।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ১২০০ ছোট বড় প্রবাল দ্বীপ নিয়ে এবং ৫ লাখের মতো জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ দেশটি। আকার এবং জনসংখ্যা উভয় দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট একটি দেশ মালদ্বীপ। তবে দেশটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে।

ধারণা করা হয় যে ভারতের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাহ্যিক বাণিজ্যের অর্ধেক এবং আমদানির ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবহনে মালদ্বীপের সমুদ্রপথ ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানিতে চীন এই একই সমুদ্রপথ ব্যবহার করে থাকে। যা গত বছর পর্যন্ত দেশটির মোট আমদানির প্রায় ৬২ শতাংশ ছিল।

ভৌগলিক সান্নিধ্য, শক্তিশালী ইতিহাস এবং অর্থনৈতিক বন্ধনের ফলে কয়েক দশকের মধ্যে ভারত এবং মালদ্বীপ নিকটবর্তী মিত্রে পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে বৃটিশ শাসকদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতই প্রথম স্বাধীন দেশ হিসাবে মালদ্বীপকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই থেকে দেশ দু’টি এক অপরের বিপদে আপদে পাশে থেকেছে। ১৯৮৮ সালে দেশটির দীর্ঘকালের স্বৈরশাসক মামুন আবদুল গাইয়ুমকে সরানোর অভ্যুত্থানচেষ্টা ভারত নসাৎ করে দিয়েছিল। তাছাড়া ২০০৪ সালে মালদ্বীপে সুনামি আঘাত হানলে ভারত সাহায্যের জন্য তিনটি জাহাজ পাঠিয়েছিল।

তবে ইয়ামিন গাইয়ুমের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে ২০১৩ সালে বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন। সেসময় ইয়ামিনের বিরুদ্ধে মালদ্বীপের গণতন্ত্রকে নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছিলো তরুণরা। জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ন্ত্রণ এবং বিরোধী নেতাদের কারাবন্দি করা হয়েছিল। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ও ইয়ামিন স্বৈরচারী মনোভাব নিয়ে মালিকে দিল্লি থেকে সরিয়ে বেইজিংয়ের দিকে ঘুরিয়েছিলেন। ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত মালিতে চীনের কোন দূতাবাসও ছিলোনা। তবে মালদ্বীপের মেরিটাইম সিল্করোড এবং দেশটির সমুদ্রপথ নিয়মিত ব্যবহার করত চীন।

২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সর্বপ্রথম এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে সফর করেছিলেন। এর পরের বছরগুলোতে আস্তে আস্তে মালদ্বীপের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করে চীন। দেশটিতে আন্তজার্তিক বিমানবন্দর তৈরিতে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে চীন। ফলে ধীরে ধীরে দেশটি ভারতের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অবনতি বা দূরত্ব সৃষ্টি শুরু করে।

চীন ও মালদ্বীপের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে ২০১৮ সালে ওই সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। চীনা বিনিয়োগ, চীনা প্রযুক্তি এবং চীনা শ্রমিক ব্যবহার করে এই সেতু তৈরি করে ইয়ামিন সরকার। যেটাকে দেশ দুটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ‘মাইলফলক’ হিসাবে প্রশংসা করা হয়েছিল। মালদ্বীপের সঙ্গে পুনরায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরির জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে নতুন সেতু তৈরির ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এই ঘোষণা কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে সেটিই হবে এখন দেখার বিষয়।
বিডিনিউজ ইউরোপ /১৪ ডিসেম্বর / জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ