কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে সরকারের মন্তব্য বিদ্বেষপ্রসূত, বিভ্রান্তিকর : গণসংহতি।কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে সরকার প্রধানের মন্তব্য বিদ্বেষ প্রসূত, বিভ্রান্তিকর ও বিভেদ সৃষ্টিকারী।কালক্ষেপনের নীতি গ্রহণ না করে শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে শান্তিপূর্ন সমাধানের পথ বেছে নেয়ার আহবান।প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সম্পূর্নরূপে বিদ্বেষপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বলে এই ধরনের মন্তব্য থেকে সরে এসে শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে শান্তিপূর্ন সমাধানের পথ বেছে নেবার আহবান জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার সমন্বয়কারী দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান মিরাজ অদ্য সোমবার ১৫ জুলাই সকাল ১১ ঘটিকার সময় জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন যা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্যে চরম অপমানজনক ও অসম্মানজক। বিশেষ করে তিনি বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন.? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতনিরা মেধাবী না.? তাহলে কি রাজাকারের নাতনিরা মেধাবী ?”
প্রধানমন্ত্রী যিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান তার কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য সম্পূর্নরূপে বিদ্বেষপ্রসূত, বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং বিভ্রান্তিকর।
শিক্ষার্থীরা দল-মত নির্বিশেষে কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলন চালাচ্ছে। সরকার শুরু থেকেই এই দাবীকে কোটা বাতিলের আন্দোলন বলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সাথে এই আন্দোলনকে একক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বলেও প্রচার করার হীন চেষ্টা চলেছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যেও আন্দো লনকে কালিমালিপ্ত করার সেই অপচেষ্টারই প্রতিফলন দেখা গেলো যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীর সর্বোচ্চ অর্জন, মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং কতিপয় বাদে এদেশের প্রত্যেকটি মানুষ কোন না কোন ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় সম্পত্তিতে পরিনত করে একে রাজনৈতিক বিভাজ নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিতর্কিত করায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। যে কোন ন্যায্য ইস্যুতে আন্দোলন করা প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার। কোটা সংস্কারের পক্ষে ২০১৮ সালেই সর্বস্তরের জনমত প্রমানিত হয়ে ছিলো। আজ সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজাকারের সন্তান আখ্যা দেয়ার মতো দায়িত্বহীন অপমানসূচক মন্তব্য থেকে সড়ে আসার আহবান জানাই।
এ ছাড়াও আন্দোলনকারীদের হাইকোর্ট দেখিয়ে সরকারের কালক্ষেপন নীতির সমালোচনা করে নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ১ দফা দাবি কোর্টের কাছে নয় নির্বাহী বিভাগের কাছে। অথচ সরকার আদালতের ব্যাপার বলে একে বার বার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোটা কিংবা নিয়োগ সংক্রান্ত এখতিয়ার সরকারের নির্বাহী বিভাগের হাতে। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এই সংবিধানের বিধানাবলী- সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন :-
তবে শর্ত থাকে যে, এই উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা বা অধীন বিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিয়া বিধিসমূহ- প্রণয়নের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং অনুরূপ যে কোন আইনের বিধানাবলী- সাপেক্ষে অনুরূপ বিধিসমূহ কার্যকর হইবে। এটাতে স্পষ্ট নির্বাহী বিভাগ চাইলে নিয়োগ ও নিয়োগের শর্তাবলী তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারবে। আর সম্প্রতি হাইকোর্ট কোটা সংক্রান্ত মামলার রায়ের পর্যবেক্ষনেও বলেছে, সরকার যদি কোটার শতকরা হার বা অনুপাত বাড়াতে, কমাতে বা পরিবর্তন করতে চায়, এই রায় সেক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না। এর অর্থ কোটা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার চাইলে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি সরকার নতুন পরিপত্র জারির মাধ্যমেও এই সংকটের সমাধান করতে পারে। কিন্তু সরকার সে পথে না হেঁটে বরং আদালতকে দোহাই হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ আদালতই সরকারকে এ বিষয়ে এখতিয়ার দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কোটা সংক্রান্ত এই সংকট তৈরির পেছনে ও এই নির্বাহী বিভাগ ই দায়ী, আর সংকট দূর করতেও তারা পারবে। কারণ ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণা ই এই সংকটের সূত্রপাত। কারণ সংবিধানের আর্টিকেল ২৮ (৪) বলা হয়েছে, নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
২০১৮ সালে যদি সমাজের সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটা কমিশন গঠণ করে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করা হতো তাহলে এই সংকট তৈরি হতো না। আমরা মনে করি, সরকার কোটা’কে পুনরায় বহাল করার দুরভিসন্ধি চিন্তা থেকে তখন কোটা বাতিল করে ছিলো। নেতৃবৃন্দ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ন সমাধানের পথ বেছে নেয়ার জন্যে সরকারের প্রতি আহবাম জানান।
নতুবা শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফূর্ত যৌক্তিক আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট যেকোন ঘটনার দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে বলে হুশিয়ার করেন।
bdnewseu/15July/ZI/Politics