ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনও প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায়, পুনরায় নির্বাচন ।ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অস্থিতিশীল প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হয়েছে।শনিবার (২৯ জূন) ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অস্থিতিশীল প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এর পর, সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হয়েছে।প্রাথমিক বেসরকারী ফলাফলে অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে ভোটসংখ্যায় এগিয়ে আছেন এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তবে, অমীমাংসিত ভোট সংখ্যার কারণে একটি ফিরতি নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ইরানে।ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রকাশিত প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, শুক্রবারের নির্বাচনে সরাসরি জয়লাভের জন্য প্রাথমিকভাবে কোনো প্রার্থী প্রয়োজনীয় ভোট পাননি। এর মধ্য দিয়ে, প্রয়াত কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে প্রতিস্থাপন করার জন্য একটি সম্ভাব্য ফিরতি নির্বাচনের সু্যোগ সৃষ্টি হয়।
ভয়েস অফ আমেরিকার খবরে বলা হয়েছ,ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা কে কত ভোট পেয়েছেন, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। আর, এটা এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের পরও দেশটির ভোটারগণ কী ‘শিয়া ধর্মতন্ত্রকে’ সমর্থন করবেন; নাকি করবেন না, তা প্রতিফলিত হবে।
ইতোমধ্যেই ১ কোটি ২০ লাখের বেশ বেশি ভোট গণনা করা হয়েছে। দেখা গেছে, পেজেশকিয়ান ভোট পেয়েছেন ৫০ লাখের বেশি। আর জালিলি ৪৮ লাখ ভোট পেয়েছেন। আরেক প্রার্থী, দেশটির পার্লামেন্টের কট্টরপন্থী স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের কালিবাফ পেয়েছেন ১৬ লাখ ভোট পান। শিয়া ধর্মীয় নেতা মোস্তফা পৌরমোহাম্মাদি পেয়েছেন ৯৫ হাজারের কিছু বেশি ভোট।
ভোটাররা তিনজন কট্টরপন্থী প্রার্থী এবং অল্প পরিচিত সংস্কারবাদী ও হার্ট সার্জন পেজেশকিয়ান-এর মধ্য থেকে একজনকে বাছাইয়ের মুখোমুখি হন। উল্লেখ্য যে, ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে, ইরানে নারী এবং পরিবর্তনের আহবানকারীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেয়া হয়ে আসছে; এবারও তাই হয়েছে। এছাড়া, এই নির্বাচনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পর্যবেক্ষকদের কোনোরূপ তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা ছিলো না।
গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে এই ভোটগ্রহণ করা হয়। এপ্রিল মাসে, ইরান গাজা যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলের ওপর প্রথম সরাসরি আক্রমণ করে। অপরদিকে, এই অঞ্চলে তেহরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো, লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে এবং তাদের হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে।এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে , লেবানন ভিত্তিক হেজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
এদিকে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে এবং অস্ত্র উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত মানের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছেছে। ইরানের যে মজুদ রয়েছে, তাতে যদি তারা অস্ত্র উৎপাদন করতে চায়, তবে তারা বেশ কয়েকটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে।
ওদিকে, কারাবন্দী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গেস মোহাম্মাদী এবং গৃহবন্দী মীর হোসেন মুসাভি এই নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়েছেন। মীর হোসেন মুসাভি ২০০৯ সালের সবুজ আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তার মেয়ে জানিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রীর সাথে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য অস্বীকার করেছেন।
এমনও সমালোচনা রয়েছে যে পেজেশকিয়ান কেবল আরেকজন সরকার-অনুমোদিত প্রার্থী। রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচারিত, পেজেশকিয়ানের ওপর নির্মিত এক তথ্যচিত্রে একজন নারী বলেন, পেজেশকিয়ানের প্রজন্ম যেভাবে ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর গঠিত সরকারের বিরোধিতা করেছিলো; তার প্রজন্মও সরকারের বিরুদ্ধে “একই ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে।”
ইরানের আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হতে হলে, কোনো প্রার্থীকে প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশের বেশিভোট পেতে হবে। যদি তা না হয়, তবে নির্বাচনের শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে এক সপ্তাহ পর ফিরতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের ইতিহাসে শুধুমাত্র একবার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরতি নির্বাচন হয়েছে, ২০০৫ সালে। তখন কট্টরপন্থী মাহমুদ আহমাদিনেজাদ সাবেক প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি-কে পরাজিত করেছিলেন।
গত ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ৬৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রাইসি মারা যান। এই দুর্ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্রন্ত্রী এবং আরো কয়েকজন কর্মকর্তা মারা যান। রাইসিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন সহযোদ্ধা এবং সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো।
তবে, রাইসিকে অনেকে চেনেন ১৯৮৮ সালে ইরানে গণহত্যা চালানোর সাথে জড়িত থাকার জন্য এবং মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নে তার ভূমিকার জন্য। মাহসা আমিনি একজন তরুণ নারী, যাকে বাধ্যতামূলক মাথার স্কার্ফ, বা হিজাব অনুপযুক্তভাবে পরার অভিযোগে পুলিশ আটক করেছিলো।
সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিরতা থাকলেও, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মাত্র একটি হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইরানেররাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, বন্দুকধারীরা অশান্ত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে ব্যালট বাক্স বহনকারী একটি ভ্যানে গুলি চালায়। এতে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন, আহত হন আরো কয়েকজন। প্রদেশটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদল এবং মাদক পাচারকারীদের নিয়মিত সংঘর্ষ হয়।
bdnewseu/30June/ZI/Iran