অভিন্ন রাজনৈতিক আশ্রয়-নীতির পথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।ইইউ পার্লামেন্ট বুধবার একগুচ্ছ আইন অনুমোদন করে রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত অভিন্ন নীতির পথ সুগম করেছে৷ তবে এ উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক রয়েছে৷অনেক তর্কবিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত নিয়মকানুনের সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে৷ দশটি আইনের আওতায় এই রাষ্ট্রজোটের বহির্সীমানায় আরো কড়া নিয়ম চালু হবে এবং সব সদস্য দেশ সম্মিলিতভাবে এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব বণ্টন করে নেবে৷ ফলে এবার থেকে শুধু গ্রিস ও ইটালির মতো দেশকে শরণার্থীদের ঢল আর একা সামলাতে হবে না৷ শরণার্থীরাও আর বিচ্ছিন্ন আশ্রয় নীতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইইউ-র একাধিক সদস্য দেশে স্বীকৃতির চেষ্টা চালাতে পারবেন না৷ উল্লেখ্য, এর আগে ইইউ-র বেশিরভাগ সদস্য দেশের সরকার সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল৷ ইউরোপীয় কমিশন সেই সব আইন কার্যকর করার উপায় বাতলে দেওয়ার পর ২০২৬ সাল থেকে সেই উদ্যোগ কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে৷
আশ্রয় সংক্রান্ত অভিন্ন নীতি কার্যকর হলে রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ বহির্সীমানার বাইরেই যাচাই করা হবে৷ যাদের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা কম, তাদের সেখান থেকেই যত দ্রুত সম্ভব কোনো ‘নিরাপদ’ দেশে প্রত্যর্পণ করা হবে৷ সেই লক্ষ্যে নতুন সীমানা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে৷ যারা প্রবেশের সুযোগ পাবে, ইইউ-র বিভিন্ন দেশে তাদের বণ্টন করা হবে৷ ফলে গ্রিস ও ইটালির মতো দেশকে আর একা বহিরাগতদের দায়িত্ব সামলাতে হবে না৷ কোনো সদস্য দেশ আশ্রয়প্রার্থীদের নিতে রাজি না হলে অর্থ বা অন্যান্য সম্পদ দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে৷
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এই বোঝাপড়াকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সংহতির উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এর ফলে একই সঙ্গে ইউরোপের সীমান্ত নিরাপদ রাখা এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে৷ তাঁর মতে, কোন পরিস্থিতিতে কোন বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবে, এবার থেকে ইইউ দেশগুলিই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে৷ আদম ব্যবসায়ী ও মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী ও সংসদীয় ক্ষমতাকেন্দ্র এমন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে উৎসাহ দেখালেও একাধিক শরণার্থী সহায়তা সংগঠন ইইউ-র নতুন অভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনলের মতে, এর ফলে আরো বেশি মানবিক বিপর্যয় ঘটবে৷ রেড ক্রস ইইউ-র উদ্দেশ্যে শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছে৷ ব্রাসেলসে ইইউ পার্লামেন্ট ভবনের সামনেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ইউরোপের কট্টর দক্ষিণ ও বামপন্থিরাও ভিন্ন কারণে এই সংস্কারের বিরোধিতা করছে৷ হাঙ্গেরির সরকার এমন অভিন্ন নীতির কড়া বিরোধিতা করে আসছে৷ বুধবার সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান নিজের দেশে শরণার্থীদের ঢলের আশঙ্কা প্রকাশ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ ফ্রান্সের বিরোধী নেতা মারিন ল্য পেনও সেই উদ্যোগের সমালোচনা করে জুন মাসে আসন্ন ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর তা বাতিল করার হুমকি দেন৷ ফলে প্রায় দশ বছর ধরে বহু তর্কবিতর্ক ও দরকষাকষির পর ইইউ পর্যায়ে আশ্রয় সংক্রান্ত সম্মিলিত ও অভিন্ন উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দূর হচ্ছে না৷
bdnewseu/11April/ZI/EU