“রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবেন না”- জাতিসংঘে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মায়ানমার দ্বারা সৃষ্ট সংকট সমাধানে, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা ও তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি এজেন্ডার শীর্ষে রাখতে, বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবেন না।”বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে, উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে, হ্যাভ দে ফরগটেন আস শীর্ষক আলাচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মায়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈশ্বিক সংহতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “এই দুর্দশাগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের জীবনধারণের জন্য আমাদের মানবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এই জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যারা ক্রমাগত, পদ্ধতিগতভাবে ও ঘৃণ্য নৃশংসতা চালাচ্ছে, সেই অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য, চলমান ও প্রচলিত আইনি এবং বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।”
স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনকে এই সংকটের সবচেয়ে কার্যকর সমাধান বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে তিনি সমন্বিত প্রচেষ্টা বহুগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানান। বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ পৃষ্ঠপোষকতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যু এখন স্থবিরতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ৬ বছরে বাস্তুচ্যুত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারেননি। বাংলাদেশে তাদের দীর্ঘদিনের উপস্থিতি, তাদেরকে শুধু হতাশার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে না; এটা কক্সবাজারের পরিস্থিতি-কে অনিশ্চিত করে তুলছে। আশ্রয়দাতা সম্প্রদায় আজ তাদের উদারতার শিকারে পরিণত হয়েছে।”
“সর্বোপরি, তাদের চাহিদার প্রতি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এখানে এখন মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের অভাব স্পষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে;” যোগ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “সমগ্র বিশ্ব অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য অনেক কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা যে রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতায় পৌঁছেছে, সে বিষয়ে সকলেই অবগত। তারপরও, বিশ্ব রোহিঙ্গাদের ভুলে যেতে পারে না; কেননা ২০১৭ সালে তাদের দেশত্যাগ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো না। তারা কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে নিপীড়ন ও বিতাড়িত হওয়ার শিকার হয়েছে।”
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, “রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত নির্যাতনের শক্ত প্রতিকারে এগিয়ে আসতে সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তাদের ভরণপোষণের জন্য মানবিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটাই সব কিছু নয়।” তিনি বলেন, “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা মিয়ানমারে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিশ্চিত জীবন যাপন করতে পারবে।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর জন্য আমাদের সমস্যাটির মূলে গিয়ে সমাধান করতে হবে, যা মিয়ানমারেই রয়েছে। তাদের নিজ দেশে সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দরকার; যাতে বাড়িঘর থেকে তাদের আর পালাতে না হয়।”
শেখ হাসিনা বলেন, “দশ লাখের বেশি বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য আশ্রয় দেয়া কখনোই বাংলাদেশের জন্য একটি বিকল্প ছিলো না। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। যেখানে জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব রয়েছে এবং এই দেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে একটি। এটি ইতোমধ্যেই জলবায়ু-প্ররোচিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার কারণে অতিরিক্ত চাপে পড়েছে।”
শেখ হাসিনা আরো বলেন, “এর পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ উপস্থিতি, আমাদের জনগণের ওপর গুরুতর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তাজনিত প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির হিসেবে পরিচিত এই আশ্রয় শিবিরের কারণে, ৬ হাজার ৮০০ একর সংরক্ষিত বন ধ্বংস হয়েছে। এর ফলে কক্সবাজারের জীব বৈচিত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২০১৭ সালের নভেম্বরে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করেছি; তার দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে তাদের মনোযোগ দিতে হবে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ছোট ব্যাচে যাচাইকৃত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি যাতে স্বচ্ছ ও স্বেচ্ছামূলক হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের মধ্যে একাধিকবার আলোচনার করা হয়েছে।”
বিডিনিউজ ইউরোপ/২৩সেপ্টেম্বর/জই/জাতিসংঘ