• শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সিরিয়ার দীর্ঘ ৫৪ বছরের পতন আসাদের পলায়ন ভোলার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার” সনদপত্র অর্জন ভিয়েনা বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর থেকে একধাপ সরে এলো মারাত্মক বন্যার কবলে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ট্রিয়ার মানবিক সহায়তা সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরো জার্মানির অভিবাসন নীতি বদলে ফেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভ্যুত্থান পরবর্তী লুটপাট বন্ধ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে চায়:রিজভী ভোলার বীর সন্তান শহীদ শাকিল কে স্মরণীয় রাখতে ডিসি কে স্মারকলিপি প্রদান দেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে চাই:জামায়াত ঝালকাঠি তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

ভাসানী বারবার ফিরে আসে লেখক: জাফর মুহাম্মদ

গোলাম মোস্তফা রাজনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকা
আপডেট : মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০

“ফুক্কা কুল্লে নেজামিন” কথাটির বাংলা দাঁড়ায় “ভেঙে দাও বিদ্যমান সকল ব্যবস্থা” (যা জুলুমের পক্ষে দাঁড়ায়) ১৭ শতকে সালে শাহ ওয়ালিউল্লাহ এর দেহলভি(র) কথাটি আন্দোলনের মূলমন্ত্র হিসেবে তুলে ধরেন। ১৭৬২ সালে তার মৃত্যুর সাথে এই মন্ত্রটি হারিয়ে যায়নি। পরবর্তীতে অন্যান্য ইসলাম পন্থীরাও এই ধারণাকে লালন করেছেন।

ব্রিটিশ সাম্রাবাদের বিরুদ্ধে ইনসাফের লড়াইয়ে যুক্ত হন সৈয়দ আহমদ বেরলভি(র), তিতুমীর, মওলানা আজাদ সোবহানি(র), মওলানা হাসরত মোহানী(র), ফকির মজনু শাহ, চেরাগ আলী ফকির, মওলানা মোহাম্মদ আলী, মওলানা শওকত আলী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সংগ্রাম জারি রেখেছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দেওবন্দ মাদরাসা। খেলাফত আন্দোলন থেকে শুরু করে লাইন প্রথা বিরোধী আন্দোলন, ফকির সন্যাসী বিদ্রোহ, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, ফরায়েজি আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন সহ সমগ্র ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন ভারতের আলেম সমাজ।

ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনে শাহাদাৎ বরণ করেন যারা তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসফাক উল্লাহ খান যিনি ছিলেন ভগৎ সিং এর সহযোদ্ধা। মুসলমানদের এই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চরিত্র ঐতিহাসিক। সেজন্যই ব্রিটিশরা মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরীর জন্য বিভিন্ন কূটকৌশল জারি রাখে। জুলুমের বিরুদ্ধে জালিমের বিরুদ্ধে, মজলুমের পক্ষে এই লড়াই উপনিবেশিত ভারত উপমহাদেশে দেশভাগের আগ পর্যন্ত বিপুলভাবে লক্ষ করা যায়।
দেশভাগের আগ পর্যন্ত দেখা যায়, মওলানা ভাসানী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। আবার পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু, মওলানা আবুল কালাম আজাদের ঐক্যবদ্ধ ইতিহাস থেকে দেখা যায় ফাঁকা বুলিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লড়াই অপেক্ষা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মওলানা ভাসানীও এই ধারার প্রবাদ পুরুষ ছিলেন। আসামে তিনি ‘বঙ্গাল খেদা’ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরব হন, কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করেন। আসামে প্রচলিত বাটখারার মহাজনী জোচ্চুরির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ৮০ তোলার নির্দিষ্ট বাটখারার প্রচলন ঘটান। আসামের ধুবড়ির চরে, ভাসান চরে তিনি কৃষক সম্মেলন করেন। অবিভক্ত পাকিস্তানে ধর্মের ব্যাবহার শুরু হয় শাসনতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য।
বিশেষত, বিরোধী মত ও পথকে দমন করতে স্বয়ং মওলানা ভাসানীকে কাফির বলা হয়। বিরোধী পক্ষের কাজকে ইসলাম বিরোধী তকমা দিয়েও দমন-পীড়ন চলতে থাকে। ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ বুঝতে পারে ইসলামের সাম্প্রদায়িক ব্যবহার কতোটা ভয়ংকর হতে পারে। আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। মওলানা ভাসানীও রাষ্ট্রীয় প্রোপাগাণ্ডার বিরুদ্ধে ইসলামের সাম্যবাদী রূপ তুলে ধরেন। সারাজীবন যেন তিনি ধারণ করে ছিলেন “ফুক্কা কুল্লে নেজামিন”। না-ইনসাফির বিরুদ্ধে, জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে মওলানা ভাসানী বলেন, “তুমি দমন করবে কাকে? ভাসানীকে? ………………….আমি মরব কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সামন্তবাদের জড় উৎখাত করে মরব।”
মওলানা ভাসানী বুঝতে পেরেছিলেন ভবিষ্যৎ সময়ে ইসলামের ‘অথোরিটি’ বা কর্তৃত্ব থাকবে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তাই তিনি এইদেশে চক্রান্তের বিরুদ্ধে বীজ বপন করলেন ‘সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়’ এর মাধ্যমে। তার ইন্তেকালের পর তার রোপিত বীজকে অঙ্কুরেই নষ্ট করা হল। ধ্বংস করা হল মানব সেবার রবুবিয়াত মিশন, খোদায়ী খেদমতগার। এসব করা হল শুধু মাত্র যে ইলম এবং ইসলাম ইনসাফের তাকে সরিয়ে সাম্রাজ্যবাদের তাবেদার ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
এ বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদীরাও বেশ সফল, স্বাধীনতার যুদ্ধ পূর্ব সময় থেকেই বিকশিত হয় তথাকথিত ইসলামি দলগুলো যারা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সেবা করে গেছে প্রভু পুঁজির এবং সাম্রাজ্যবাদের। বর্তমান সময়ে যে বিশাল বিশাল তৌহিদি জনতার মিছিল দেখা যায় নানান ইস্যুতে তাদের মিছিলটা কেন কৃষকের ফসলের ন্যায্য দামের আন্দোলনে কিংবা নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুক্ত হচ্ছে না?
বরং এমন কিছু ইস্যুতে এই বিপুল পরিমান তৌহিদি জনতাকে নামানো যাচ্ছে যার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার চুরি কে আড়াল করা যায়। আড়াল করা যায় একটা সামষ্টিক ফ্যাসিজমকে। জুলুমে জাহেলিয়াতে আমাদের আবার প্রয়োজন ১৭ শতকের সেই শ্লোগান “ফুক্কা কুল্লে নেজামিন “। কান পেতে রই, তাজরীন গার্মেন্টস কিংবা এ ওয়ান গার্মেন্টস এ দীপ্ত কন্ঠে মওলানা ভাসানী বলছেন ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। দিল্লি অভিমুখে কৃষকের মিছিলে ভেসে ওঠে মওলানার মুখের অবয়ব।

লেখক : জাফর মুহাম্মদ
তরুণ গবেষক, মওলানা ভাসানী আর্কাইভ।
বিডিনিউজ ইউরোপ/১ ডিসেম্বর/ জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ